নিজস্ব প্রতিবেদক
কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে আমরা সাগরের মাঝখানে নিয়ে যাচ্ছি বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যত বিমান যাবে তাদের রিফুয়েলিং সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা হবে এটি। ভবিষ্যতে কক্সবাজারই হবে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা।
রোববার (২৯ আগস্ট) কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, আমাদের দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগটা বাড়াতে হবে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়লে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণ হবে। আমরা শুধু পশ্চিমাদের দিকে মুখ করে থাকব না। পাশাপাশি অন্যান্য যে বন্ধু দেশগুলো রয়েছে, সেখানেও যাতে আমাদের বিমান যায় সেই চেষ্টাই করব।
সরকার প্রধান বলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আধুনিকায়ন করতে চাইছি। এটা একটা আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসাবে যাতে উন্নত হয়, ভুটান, নেপাল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্য এই বিমানবন্দরটা ব্যবহার করতে পারে। সিলেট বিমানবন্দর ভারতের আসাম, মেঘালয় রাজ্যের অনেকেই ব্যবহার করতে পারে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ত্রিপুরা থেকে শুরু করে ভারতের অনেক প্রদেশ ব্যবহার করতে পারে। একটা আন্তর্জাতিক সহযোগিতা তৈরি করা এবং সেভাবে উন্নতি করার চিন্তা আমাদের মাথায় রয়েছে। সেভাবে এগুলো অত্যাধুনিক করতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের একটি অন্যতম প্রধান এভিয়েশন হাব অর্থাৎ আকর্ষণীয় বিনিয়োগ ও পর্যটন গন্তব্য হিসেবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্য স্থির করেছি। বেসামরিক বিমান পরিবহনে নিরাপদ, দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য এভিয়েশন সুবিধা দেওয়ার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
কক্সবাজারের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, পৃথিবীতে স্যান্ডি বিচ কম আছে। সেখানে আমরা বিদেশিদের জন্য বিশেষ অঞ্চল করে দেব। তারা যেন তাদের মতো করে উপভোগ করতে পারে সেই ব্যবস্থা করব। সোনাদিয়াতে আমরা ইকো পার্ক করে দেব। মহেশখালীতো গভীর সমুদ্র বন্দরে রূপান্তর হয়েছে। এটা আরও উন্নত হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ হলে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের যত বিমান যাবে তাদের রিফুয়েলিং সবচেয়ে সুবিধাজনক জায়গা হবে এটি। ভবিষ্যতে কক্সবাজারই হবে পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এখানে অল্প সময়ে যেতে পারবে।
তিনি বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণ করে আমরা সাগরের মাঝখানে নিয়ে যাচ্ছি। এজন্য যারা সাহস করে কাজ করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। অনেকের অনেক দ্বিধা ছিল, কথা ছিল, আর আমাদের পরিবেশবিদ কিছু রয়েছে, তারা যা কিছু পায়, একেবারে লাফ দিয়ে পড়ে। কোনো কিছুর আগামাথা বোঝে না। প্রতিবাদ করাটাই বড় কথা। সবকিছু মোকাবিলা করেই কাজটা শুরু করছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বিমানবন্দরের রানওয়ে বর্তমানে ৯ হাজার ফুট। মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরও ১ হাজার ৭০০ ফুট বর্ধিত করার লক্ষ্যে পেভমেন্ট, এয়ারফিল্ডলাইটিং সিস্টেম, জিওমেট্রিক ও স্ট্রাকচারাল ডিজাইন, ড্রইং ও ডকুমেন্ট প্রণয়ন করেছি। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ‘কক্সবাজার বিমান বন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্প’র কাজ শেষ হবে।
বিমানের কর্মীদের সততা ও দক্ষতার সঙ্গে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ এবং ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। আশা করি, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এ কাজ আমরা শেষ করতে পারব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের সঙ্গে আমরা রেলের সংযোগ করার জন্য একটা আন্ডারপাস করে সংযোগ করতে চাইছি। আমাদের মেট্রোরেলের কাজ সম্প্রসারণ করে কমলাপুরে স্টেশন পর্যন্ত নেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি।
সরকার প্রধান বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল বিমানবন্দরকে উন্নত করব। ঢাকা শাহজালাল বিমানবন্দরে থার্ড টার্মিনাল নির্মাণ, নতুন রাডার স্থাপন ও জেট ফুয়েল সরবরাহ করার জন্য পাইপলাইন নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করব। কক্সবাজারে প্রতিষ্ঠা করব সুপিরিয়র বিমান অবতরণে সক্ষম দেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন বিমানবন্দর।
তিনি বলেন, শুধু কক্সবাজার নয়, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণ, বাগেরহাটে খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদ্যমান রানওয়ে ও টেক্সিওয়ের শক্তি বাড়ানোর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আমরা বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭ এবং আকাশপথে পরিবহন (মন্ট্রিল কনভেনশন) আইন, ২০২০ সহ বেশ কিছু আইন ও সংশ্লিষ্ট বিধিমালা প্রণয়ন করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। বিগত সাড়ে বারো বছরে বোয়িং কোম্পানির ড্রিমলাইনারসহ মোট ১৬টি অত্যাধুনিক বিমান যুক্ত করেছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪টি বোয়িং-৭৭৭, ২টি বোয়িং-৭৩৭ ও ৪টি বোয়িং-৭৮৭-৮, ২টি বোয়িং-৭৮৭-৯ ও ৪টি ড্যাশ-৮। অত্যাধুনিক এই উড়োজাহাজগুলো দিয়ে শিগগিরই নিউইয়র্ক, টরেন্টো ও সিডনির মতো দূরবর্তী গন্তব্যে ফ্লাইট পরিচালনা করব। এই লক্ষ্যে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষকে ক্যাটাগরি-১ এ উন্নীতকরণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পরে বিমান বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিমান’ নামটিও তারই দেওয়া- শুরুতে এটি ‘এয়ার বাংলা ইন্টারন্যাশনাল’ নামে পরিচিত ছিল। বিমান বাংলাদেশের লোগো তৈরি জাতির পিতার তত্ত্বাবধানেই হয়েছিল। আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট চালু করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ বিমানের জন্য সে সময় তিনি ১২টি উড়োজাহাজ সংগ্রহ করেন। তিনি ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, যশোর, ঈশ্বরদী ও কক্সবাজার এবং লন্ডন, কলকাতা, ব্যাংকক, দুবাই ও কাঠমান্ডু রুটে ফ্লাইট চালু করেন। সেই সঙ্গে ঢাকা থেকে রেঙ্গুন, আবুধাবি ও মুম্বাই রুটে ফ্লাইট চালুর উদ্যোগ নেন। তার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ১৯৭৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক সিভিল এভিয়েশন সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। নেদারল্যান্ড, আফগানিস্তান, রাশিয়া ও যুগোস্লাভিয়ার সঙ্গে দ্বি-পাক্ষিক বিমান চলাচল চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দেশ পরিচালনার জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এর মধ্যেই তিনি বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন।
কক্সবাজারের প্রতি জাতির পিতা আলাদা একটা টান ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বেশিরভাগ সময়ই জেলখানায় ছিলেন। যখনই তিনি বাইরে থাকতেন প্রতিবছর শীতকালে আমাদেরকে নিয়ে একবার সেখানে বেড়াতে যেতেন। তখন সেখানে ছোট ছোট কটেজ ছিল, মাটির ঘর ছিল। সেগুলো ভাড়া করে থাকতে হতো। সেই সময় উখিয়া সফরের স্মৃতিচারণ করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী, মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, স্বাগত বক্তব্য রাখেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ মফিদুর রহমান।
বিএসডি/এমএম