নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছরেই শেষ হচ্ছে ভারতের শিলিগুড়ির লুমালীগড় থেকে বাংলাদেশের দিনাজপুরের পার্বতীপুর পর্যন্ত ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ। কাজ শেষ হলে আর রেলপথে নয়, ভারত থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে বাংলাদেশে আমদানি শুরু হবে জ্বালানি তেল ডিজেল।
ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক টিপু সুলতান জানান, ইতিমধ্যেই ৯০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্ষাকালের জন্য কাজ বন্ধ রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া পাঁচটি এসভি স্টেশনের (সেকশনলাইজিং ভালভ স্টেশন) কাজও শেষ হয়েছে। প্রতিটি এসভি স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব প্রায় ৩০ কিলোমিটার। অপর দিকে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) তেল ডিপোতে বাফার স্টোরেজ ট্যাংক নির্মাণের কাজ চলছে স্বাভাবিক গতিতে। ট্যাংকের ধারণ ক্ষমতা প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন। ডিপোর বর্তমান মজুত পরিমাণ ১৫ হাজার মেট্রিক টনের মতো।
গত ২০২০ সালের মার্চ মাসে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মাধ্যমে ভারত-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ শুরু হয়। পাইপলাইন দিয়ে তেল আমদানি শুরু হলে রংপুর ও রাজশাহীর আওতাধীন উত্তরাঞ্চলের ১৬টি জেলায় ন্যূনতম পরিবহন খরচসহ ডিজেলের সরবরাহ স্থিতিশীল থাকবে। এ জন্য আরো কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দুটি তেল ডিপো এবং সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ী ডিপোতে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরের দৌলতপুর থেকে তেলবাহী ওয়াগন ও জাহাজের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ করা হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল। বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে সড়ক পথে দিনাজপুরের পার্বতীপুরে তেল আনতে প্রতিটি ব্যারেলের পরিবহন খরচ ৮ ডলার। কিন্তু ভারত থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে ডিজেল সরবরাহ শুরু হলে প্রতি ব্যারেলের জন্য এই খরচ প্রায় ৫ ডলার হবে। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে উত্তরাঞ্চলে ডিজেল পরিবহনের জন্য কয়েক দিনের প্রয়োজন হলেও পার্বতীপুর ডিপোতে পাইপলাইনের মাধ্যমে এক ঘণ্টার মধ্যে ডিজেল সরবরাহ করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
সব দিক বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে নিরবচ্ছিন্ন ডিজেল সরবরাহ অব্যাহত রাখতে ভারতের শিলিগুড়ির লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে ডিজেল আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। শিলিগুড়ির লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং পার্বতীপুর তেল ডিপোর মধ্যে দূরত্ব প্রায় ১৩০ কিলোমিটার।
এই পাইপলাইন প্রকল্পের প্রাক্কলন ছিল ৫২০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারত সরকার ৩০৩ কোটি টাকা দেয় এবং বাংলাদেশ সরকার বাকি অর্থ ২১৭ কোটি টাকা দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সময়কাল ২০২০ থেকে জুন ২০২২ সাল পর্যন্ত। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করেন। চুক্তি স্বাক্ষরের ১৭ মাস পর ২২ ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের প্রথম চালানটি ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে আসে। আনুষ্ঠানিকভাবে একই বছরের মার্চের শুরুতে পাইপলাইনের কাজ শুরু হয়। ভারতের লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেড যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
পাইপলাইনের মাধ্যমে বছরে প্রায় ১০ লাখ মেট্রিক টন ডিজেল ভারত থেকে বাংলাদেশে আমদানি করা যাবে। প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ আড়াই লাখ টনের মতো ডিজেল আমদানি করবে এবং পরের বছরগুলোতে এটি ৪ থেকে ৫ লাখ টন পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে। চুক্তির অধীনে সরবরাহ শুরু হওয়ার দিন থেকে ১৫ বছরের জন্য বাংলাদেশ ডিজেল নেবে।
বাংলাদেশ বর্তমানে লুমালীগড় রিফাইনারি লিমিটেড (এনআরএল) থেকে পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ২ হাজার ২০০ টন ডিজেল আমদানি করে এবং বিপিসি বাংলাদেশ রেলওয়ের মাধ্যমে দেশের উত্তরাঞ্চলের পার্বতীপুর তেল ডিপোতে জ্বালানি বহন করে এবং পরে ডিজেল গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়।
বিএসডি/এফএ