আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কয়েকমাস চুপচাপ থাকার পর ভারতে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে কৃষক আন্দোলন। সোমবার ভারতের দিল্লি, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় ভোর ৬ টা থেকে বেলা ৪ টা- ১০ ঘণ্টার ‘ভারত বনধ’ কর্মসূচি পালন করছেন আন্দোলনরত কৃষকরা।
এনডিটিভি অনলাইন, হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কৃষকদের আন্দোলন কর্মসূচির কারণে এই তিন প্রদেশে সোমবার ট্রেনের সব সূচি বাতিল করা হয়েছে। আন্দোলনরত কৃষকদের একটি অংশ চার রাজ্যের ট্রেন লাইনগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।
অপর অংশ অবস্থান নিয়েছেন তিন প্রদেশের সংযোগকারী সড়গুলোতে। সড়ক অবস্থানের পাশাপাশি টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন তারা। ফলে, সোমবার সকাল থেকে সংযোগকারী সড়কগুলোতে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট।
এনডিটিভি অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তরপ্রদেশের গাজিপুর জেলায় দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সংযোগকারী সড়ক দিল্লি-মিরাট এক্সপ্রেস ওয়েতে অবস্থান নিয়েছেন নিয়েছেন কৃষকরা। এছাড়া দিল্লির প্রধান দুই জেলাশহর গুরগাঁও ও নয়ডার মূল সড়কেও তাদের অবরোধ চলার কারণে বাইরে থেকে কোনো যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না দিল্লিতে।
দিল্লি ও দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সংযোগকারী সড়কের পাশাপাশি কৃষক অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে পাঞ্জাব ও হরিয়ানা প্রদেশের সংযোগকারী সড়কেও। দুই প্রদেশের সীমান্তবর্তী এলাকা শম্ভুতে অবস্থান নিয়েছেন তারা।
রোববার ‘ভারত বনধ’ কর্মসূচির ডাক দেয় ভারতের ৪০ টি কৃষক সংগঠনের ঐক্যমঞ্চ সংযুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম)। মোর্চার অন্যতম নেতা রাকেশ টিকায়েত রোববার এক বার্তায় বলেন, ‘কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রী আমাদের আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন, কিন্তু তার এই আহ্বান যে লোক দেখানো- তা আমরা জানি।’
‘আমাদের দাবি পরিষ্কার। অবিলম্বে কৃষি বিষয়ক যাবতীয় কালো আইন বন্ধ করতে হবে। প্রয়োজনে আমরা আরও ১০ বছর আন্দোলন করব।’
অবরোধের ফলে দিল্লি-পাঞ্জাব এবং উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু এলাকায় যান চলাচল স্থবির হয়ে আছে। সরকারি-বেসরকারি কার্যালয়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, দোকানপাট সব বন্ধ আছে সেসব এলাকায়। তবে চিকিৎসা ও জরুরি সেবাকে অবরোধের আওতামুক্ত রাখা হয়েছে।
পাঞ্জাবের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এবং উত্তরপ্রদেশের বিরোধী দল বহুজন সমাজ পার্টি ও ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি-মার্ক্সবাদী (সিপিএম) সোমবারের ‘ভারত বনধ’ কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়েছেন। কর্মসূচিকে সাফল্যের জন্য কৃষকদের সহযোগিতা করতে কর্মীদের নির্দেশও দিয়েছেন এই তিন দলের নেতৃবৃন্দ।
২০২০ সালের ২০ সেপ্টেম্বর দেশের কৃষি ব্যবস্থার সংস্কারে ভারতের পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় তিনটি বিল উত্থাপন করেম ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার।
বিলগুলোতে কৃষিপণ্যের মজুতদারীর ওপর সীমা তুলে নেওয়া, কোম্পানি ও বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে চুক্তিভিত্তিক চাষ এবং উৎপাদিত কৃষি পণ্যের সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (মিনিমাম সাপোর্ট প্রাইস—এমএসপি) তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়।
সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই বিল তিনটি আইনে পরিণত হয়। নভেম্বর থেকে এই আইনগুলো বাতিলের দাবিতে দিল্লির সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর কয়েক লাখ কৃষক।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যদিও বলেছেন, দেশের বিস্তৃত ও মান্ধাতা আমলের কৃষি ব্যাবস্থাকে ঢেলে সাজানো ও আধুনিকায়নই নতুন তিন কৃষি আইনের উদ্দেশ্য, কিন্তু তার এই বক্তব্যে আস্থা রাখতে পারছেন না কৃষকরা।
তারা বলছেন, ওই তিন আইনের ফলে বেসরকারি নানা বড় বড় কোম্পানি কৃষিখাতে হর্তাকর্তা হয়ে যাবে এবং দরিদ্র কৃষকরা ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া নিয়ে তাদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বেন।
দিল্লিতে কৃষক আন্দোলন শুরুর পর থেকে মোর্চার নেতাদের সঙ্গে এ পর্যন্ত এগার দফা বৈঠক হয়েছে ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের। কিন্তু মোর্চার নেতারা আইন বাতিলের দাবিতে অটল থাকায় এবং কেন্দ্রীয় সরকার এই দাবির বিরুদ্ধে অনড় অবস্থান নেওয়ায় এখন পর্যন্ত এই সংকটের কোনও সমাধান হয়নি।