জেলা প্রতিনিধি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ :
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদের ৩ নং ওয়ার্ডের দমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) সকাল ৮টা থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। সব কিছুই স্বাভাবিকভাবেই চলছিল। হঠাৎ দুপুর ১টার দিক কয়েকজন যুবক লাঠিসোটা নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করেন। ভোট দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারী ও পুরুষদের হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বাইরে বের করে দেন তারা। এরপর চলে ২০-৩০ মিনিটের তাণ্ডব। ইচ্ছেমতো ব্যালটে সিল মারা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ভোটকেন্দ্র দখলের পর পুলিশ একটি ঘরে গিয়ে আশ্রয় নেয়। এ সময় আরেক পক্ষ এসে বাধা দিলে দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে তারা পালিয়ে যান। পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যালট পেপার নিয়ে চলে যাওয়ায় দুপুর ১টার পর আর ভোটগ্রহণ হয়নি।
ভোটার সুফিয়া বেগম বলেন, লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ ১৫-২০ জন ছেলে এসে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এ সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয় সবাইকে। পরে বিকেল ৩টার দিকে আবার ভোট দিতে আসতে বলছে, ব্যালট পেপার নেই। ভোট দেওয়া যাবে না।
পুরুষ কক্ষের এক প্রার্থীর এজেন্ট ইউসুফ আলী বলেন, নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকরা হামলা করে ভোটকেন্দ্র দখল করে। এ সময় আমাকে ব্যাপক মারধর করে তারা। এমনকি ইচ্ছেমতো সিল মারে নৌকা প্রতীকে। পুলিশ সব কিছু চুপচাপ দেখেছে। কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
সংরক্ষিত নারী ইউপি সদস্য প্রার্থী পুষ্পা রানী জানান, এ ঘটনার পর ভোটাররা আসতে ভয় পাচ্ছে। পুলিশের অনুরোধে ভোট দিতে আসলেও তারা ব্যালট পেপার না পেয়ে ফিরে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মতিউর রহমান। অন্যদিকে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী মামুনুর রশীদের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
দমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার রুহুল আমিন বলেন, দুপুর ১টার দিকে কয়েকজন যুবক এসে হামলা করে ভোটকেন্দ্র দখল করে। এ সময় তারা ২০-২৫ মিনিটে আনুমানিক ৫০০-৭০০ সিল মেরেছে। এমনকি চলে যাওয়ার সময় ব্যালট পেপার নিয়ে চলে যায়। এতে ঘণ্টাখানেক পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে আবারও ভোটগ্রহণ শুরু হলে দেখা যায় চেয়ারম্যানদের প্রতীকের ব্যালট পেপার নেই।
তিনি আরও জানান, চেয়ারম্যান পদে দুপুরের পর আর কোনো ভোটগ্রহণ হয়নি। ঘটনাটি জেলা নির্বাচন অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্তু ভোটগ্রহণের শেষ সময় পর্যন্ত আর কোনো ব্যালট পেপার আসেনি।
পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, অল্প সংখ্যক পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। তাই তারা নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থে নিরাপদে আশ্রয় নেন।
এ ঘটনার পর বিকেল ৪টার পর ভোট গণনা শুরু হয়। এ বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোতাওয়াক্কিল রহমান বলেন, কেন্দ্র দখল করে সিল মারার ঘটনা ঘটলে সেই ভোট বাতিল করে গণনার নিয়ম রয়েছে। তবে প্রিসাইডিং অফিসার এমন কিছু জানাননি বলে তিনি জানান।
গোমস্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস জানান, দমইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।