নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সাবেক সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরীর দাফন গতকাল সম্পন্ন হয়েছে। ‘অগ্নিকন্যা’খ্যাত মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে প্রচারিত বিভিন্ন খবরের সমালোচনা করে একটি স্ট্যাটাস লিখেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম।
শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) ১০টা ২৫ মিনিটের দিকে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে তা প্রকাশ করেন।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো মতিয়া চৌধুরীর দীর্ঘ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে সামনে এনে তাকে সম্মান জানিয়েছে।
কিন্তু নির্মোহ শোক সংবাদের পরিবর্তে সেগুলোতে মূলত ছিল সাধারণ প্রশংসা, যেন একজন মুরিদ তার পীর সম্বন্ধে লিখছেন। এটা পরিষ্কার যে আমরা ছোট থেকে অনেক সুফি তাজকিরা, বিশেষ করে তাজকিরাতুল আউলিয়া এবং তাজকিরাতুল আম্বিয়া পড়ে বড় হয়েছি।’
প্রেসসচিব লিখেছেন, ‘১৯৬০ সালে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেবে তার ভূমিকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ইতিহাসের কিছু গৌরবান্বিত অধ্যায়েও তার ভূমিকা রয়েছে।
যেমন আইয়ুব খানের আমলে ছাত্র আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তী সময়ে আশির দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। একজন শোকগাথা লেখককে অবশ্যই এই ঘটনাগুলো স্পর্শ করতে হবে।’
তিনি আরো লিখেছেন, ‘কিন্তু আপনারা (সংবাদমাধ্যম) শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে তার ভূমিকাকে, তিনি কীভাবে ছাত্র আন্দোলনকে দানব আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি কীভাবে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ হয়েছেন, তা অবজ্ঞা করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে চলা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যে কম গুরুত্ব পাচ্ছে, এটিই আপনারা সামনে এনেছেন।
তিনি যেভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকের বন্দনা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা সেটিকেই বৈধতা দিচ্ছেন।’
আরো লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে যুগ যুগ পরও আমাদের সংবাদপত্রগুলো শোক সংবাদ লেখার শিল্প ধরতে ব্যর্থ। অথবা তারা মৃত ব্যক্তির সমালোচনা না করার ইসলামী রীতির সমর্থক।’
গত বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাবেক সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী মারা যান। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় তার প্রথম জানাজা নিজ বাসভবন রাজধানীর রমনা অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়।
সেখানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তার কফিনে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়। বাদ জোহর গুলশান আজাদ মসজিদে তার দ্বিতীয় জানাজা হয়। দুই দফা জানাজা শেষে মতিয়া চৌধুরীকে মিরপুরের বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তার স্বামী বজলুর রহমানের কবরে সমাহিত করা হয়।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ৩ দফায় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন মতিয়া চৌধুরী। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সংসদ বিলুপ্ত হলে এমপি পদ হারান মতিয়া চৌধুরী।