আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
ভারতে গান্ধীবাদী কর্মী আন্না হাজারে যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছিলেন তখন তার অন্যতম সঙ্গী ছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। আন্না হাজারের অনেকটা বিরুদ্ধে গিয়েই তিনি ২০১২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল গড়েন। ২০১৩ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচনে তার দল আম আদমি পার্টি (আপ) দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। দিল্লি বিধানসভার ৭০টি আসনের মধ্যে আপ পায় ২৮টি আসন। একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও কংগ্রেসের সমর্থনে এই দল দিল্লিতে সরকার গঠন করে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তবে কংগ্রেস সমর্থন না দেওয়ায় জন লোকপাল বিল পাশ করতে তারা ব্যর্থ হয়। এ কারণে মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় তার সরকার পদত্যাগ করে।
এরপর ২০১৫ সালের নির্বাচনে তারা ৭০ আসনের মধ্যে ৬৭টিতেই জয় পায়। সবের্শষ ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তারা ৬২টি আসনে জয়ী হয়ে তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় রয়েছে। এর মধ্যেই ভারতের আলোচিত নেতা হয়ে উঠেছেন কেজরিওয়াল। তবে সবচেয়ে বড় আলোচনার জন্ম দিয়েছেন এবারের পাঞ্জাব বিধানসভা নির্বাচনে। তার দল পাঞ্জাবের ক্ষমতাসীন দল কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করেছে।
এই নির্বাচনের আগে আপ প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের দাবি ছিল, মানুষের ভালোবাসার কাছে সব ষড়যন্ত্র হার মানবে। ঠিক যেন সেটাই হয়েছে। পাঞ্জাবে কংগ্রেস, বিজেপি এবং অকালি দলের বিরুদ্ধে একা লড়াই করা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন তিনি। প্রায় ৯০টি আসনে আম আদমি পার্টি জিতে নিজেদের অস্তিত্বের প্রমাণ দিয়েছে। সেখানে তাদের কাছাকাছি কেউ আসতে পারেনি।
পাঞ্জাবে এই বড় জয়ের মাধ্যমে আপ ‘দিল্লিকেন্দ্রিক’ দল হিসেবে তার ট্যাগটি সরিয়ে দিয়েছে এবং দুটি রাজ্যে সরকার গঠনে সফল হয়েছে। এমনটি অন্য কোনো আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল আগে পারেনি। বহুজন সমাজ পার্টি, সমাজবাদী পার্টি, বিজু জনতা দল, তৃণমূল কংগ্রেস, শিবসেনা, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি, জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ), জনতা দল (ইউনাইটেড), এলজেপি—এখন পর্যন্ত এক রাজ্যেই সরকার গঠনে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামদের ছাড়া এটিই একমাত্র দল যার দুটি রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ সরকার রয়েছে। এই জয় ভারতীয় রাজনৈতিক পটভূমিতে এক বড় পরিবর্তন।
আপের এই জয়ের বিষয়ে ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক নীরজা চৌধুরী বলেন, এটি একটি বড় বিজয়। জাতীয় পর্যায়ে আপের এই বিস্ফোরণ সত্যিই ভারতের রাজনীতিতে একটি বিরল মুহূর্ত।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত পাঁচটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনকে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল হিসেবে দেখছেন। পাঁচ রাজ্যের চারটিতেই জিতেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল বিজেপি। তবে তাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো দ্বিতীয়বারের মতো উত্তর প্রদেশে জয়।
বলা হয়ে থাকে, দিল্লির মসনদের রাস্তা উত্তর প্রদেশের মধ্য দিয়ে যায়। অর্থাত্ উত্তর প্রদেশে জয়ের মাধ্যমে আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ক্ষমতায় থাকা অনেকটাই মসৃণ হয়ে গেছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।
ভারতের রাজনীতিতে নরেন্দ্র মোদির প্রভাব এখনো প্রশ্নাতীত! আগামী নির্বাচনে তার বিকল্প অর্থাত্ বিরোধীদের নেতা কে হবেন সেটা নিয়ে এখন চলছে জল্পনা-কল্পনা। আনন্দবাজার পত্রিকার এক খবরে বলা হয়েছে, দিল্লিতে প্রথমবার সাফল্য পেয়েই অরবিন্দ কেজরিওয়াল ভেবেছিলেন, আম আদমি পার্টি জাতীয় রাজনীতিতেও কংগ্রেসের বদলে বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ হয়ে উঠবে। কেজরিওয়াল নিজে ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে বারাণসীতে প্রার্থী হয়েছিলেন। পুরো ভারতে শতাধিক আসনে প্রার্থী দিয়েছিল আপ। কিন্তু জাতীয় দল হয়ে ওঠার স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাওয়ায় কেজরিওয়াল শেষে দিল্লিতেই মন দেন।
আট বছর পরে আপ দিল্লির পরে পাঞ্জাবও দখল করে নেওয়ায় বিরোধী শিবির মনে করছে, এবার আপ অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বিরোধী শিবিরের প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইবে।
বিশেষত তৃণমূল শিবিরের আশঙ্কা, কেজরিওয়াল এই দৌড়ে মমতা ব্যানার্জিকেও পেছনে ফেলে দিতে পারেন। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির বিজয়রথ আটকে তৃণমূল দলের নেত্রীকে বিরোধী জোটের প্রধানমন্ত্রী পদের মুখ হিসেবে তুলে ধরতে চাইছিল। কিন্তু দিল্লি ও পাঞ্জাবের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতা, হিন্দিভাষী, আইআইটি-র ইঞ্জিনিয়ার, সাবেক রাজস্ব কর্মকর্তা কেজরিওয়াল এখন মমতাকে পেছনে ফেলে দিতে পারেন।
বিএসডি/ এফএস