ধর্ম ডেস্ক:
মুসলমানদের মিলনমেলা মসজিদ। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় প্রতি ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে মুসল্লিরা ছুটে আসেন আল্লাহর ঘরে। সেখানে তারা প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করে। রমজান মাসে ইতিকাফ করে থাকে। তবে নামাজ ছাড়াও কিছু কাজ আছে, যা মসজিদে করা বৈধ।
পাঠদান : মসজিদ হলো শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম স্থান। মুসলমানরা তাদের ধর্মীয় বিষয় প্রতিদিন ইমামের কাছ থেকে শিক্ষা নেবেন এবং সে অনুযায়ী আমল করবেন। আবার ইমামও বিভিন্ন সময়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে জনসাধারণকে শিক্ষা দেবেন। আবু ওয়াকিদ আল-লায়সি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সা.) একবার মসজিদে বসেছিলেন, তার সঙ্গে আরো লোকজন ছিল। এ অবস্থায় তিনজন লোক এলো। তন্মধ্যে দুজন আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর দিকে এগিয়ে এলো এবং একজন চলে গেল। আবু ওয়াকিদ (রা.) বলেন, তারা দুজন আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকল। অতঃপর তাদের একজন মজলিসের মধ্যে কিছুটা খালি জায়গা দেখে সেখানে বসে পড়ল এবং অন্যজন তাদের পেছনে বসল। আর তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে গেল। যখন আল্লাহর রাসূল (সা.) অবসর হলেন তখন (সাহাবিদের লক্ষ্য করে) বলেন, আমি কি তোমাদের এই তিন ব্যক্তি সম্পর্কে কিছু বলব না? তাদের একজন আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করল, আল্লাহ তাকে আশ্রয় দিলেন। অন্যজন লজ্জাবোধ করল, তাই আল্লাহ তার ব্যাপারে লজ্জাবোধ করলেন। আর অন্যজন (মজলিসে হাজির হওয়া থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিল, তাই আল্লাহ তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬)
বিচার-ফায়সালা ও মীমাংসা: কোনো বিষয়ে মীমাংসার প্রয়োজন হলে অথবা কোনো বিষয়ে সমাধান দিতে চাইলে মসজিদে বসেই দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি তা করতে পারবে। (বুখারি, হাদিস : ৬৩)
আয়েশা (রা.) বলেন, সুদ সম্পর্কিত সুরা বাকারার আয়াত অবতীর্ণ হলে নবী করিম (সা.) মসজিদে গিয়ে সেসব আয়াত সাহাবিদের পাঠ করে শোনান। অতঃপর তিনি মদের ব্যবসা হারাম করে দেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৫৯)
মসজিদে অবস্থান ও খাওয়াদাওয়া: অন্য বৈধ কাজের মতো মসজিদে অবস্থান করা ও খাওয়াদাওয়া করা জায়েজ। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘খন্দকের যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তির নিক্ষিপ্ত তীরে সাদ ইবনে মুআজ (রা.) আঘাতপ্রাপ্ত হলে রাসুল (সা.) তার জন্য মসজিদের ভেতর একটি তাঁবু টানালেন। যেন তিনি কাছ থেকে তাকে দেখতে পারেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৩১০১)
আর যারা ইতিকাফ করবে তারা মসজিদে অবস্থান করবে এবং মসজিদেই খাওয়াদাওয়া করবে। এ ছাড়া রমজান মাসে মসজিদে ইফতারেরও ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে।
প্রয়োজনীয় বৈধ কথাবার্তা বলা: জাবের বিন সামুরা (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) যে স্থানে সালাত আদায় করতেন সূর্য পূর্ণভাবে উদয় না হওয়া পর্যন্ত ওই স্থান থেকে উঠতেন না। সূর্য উদয় হলে উঠে দাঁড়াতেন। আর ইত্যবসরে কথাবার্তা বলতেন এবং জাহেলি যুগের কাজকারবারের আলোচনা করে সাহাবারা হাসতেন এবং রাসুল (সা.)ও মুচকি হাসতেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১২৯৪)
ঘুমানো: বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে ঘুমানো যায়। আব্বাদ ইবনু তামিম (রা.) তার চাচা থেকে বর্ণনা করেন, ‘আমি রাসূল (সা.)-কে মসজিদের মধ্যে চিৎ হয়ে এক পা অন্য পায়ের ওপর রেখে শায়িত অবস্থায় দেখেছি।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৭৫)
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমরা রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় মসজিদে ঘুমাতাম। অথচ আমি তখন যুবক ছিলাম।’ (বুখারি, হাদিস : ৪৪০)
অতএব বিশেষ প্রয়োজনে মসজিদে থাকা ও ঘুমানো যায়। তবে এ ক্ষেত্রে মসজিদের পবিত্রতার আদবগুলো যাতে লঙ্ঘিত না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
অভাবী লোকদের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করা: মুহাম্মাদ ইবনুল মুসান্না আল-আনাজি (রহ.) মুনজির ইবনু জারির থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমরা ভোরের দিকে রাসূল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এ সময় তার কাছে পাদুকাবিহীন, প্রায় বস্ত্রহীন, গলায় চামড়ার ‘আবা’ (কালো ডোরাকাটা চাদর দিয়ে কোনো রকম শরীর ঢাকা পোশাক) পরিহিত এবং নিজেদের তরবারি ঝুলন্ত অবস্থায় একদল লোক এলো। এদের বেশির ভাগ কিংবা সবাই মুজার গোত্রের লোক ছিল। অভাব-অনটনে তাদের এ করুণ অবস্থা দেখে রাসূল (সা.)-এর মুখমণ্ডল পরিবর্তিত ও বিষণ্ন হয়ে গেল। তিনি ভেতরে প্রবেশ করেন, অতঃপর বেরিয়ে এলেন। তিনি বিলাল (রা.)-কে আজান দিতে নির্দেশ দিলেন। বিলাল (রা.) আজান ও ইকামত দিলেন। সালাত শেষ করে তিনি উপস্থিত মুসল্লিদের উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং সুরা নিসার প্রথম আয়াত ও সুরা হাশরের ১৮ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত করেন।
অতঃপর রাসূল (সা.) বলেন, তোমাদের প্রত্যেকেরই তাদের দিনার, দিরহাম, কাপড়চোপড়, গম ও খেজুরের ভাণ্ডার থেকে দান করা উচিত। অবশেষে তিনি বলেন, যদি খেজুরের এক টুকরাও হয়। বর্ণনাকারী বলেন, এটা শুনে আনসারদের এক ব্যক্তি একটি থলে নিয়ে এলো, যা সে বহন করতে পারছিল না। অতঃপর লোকেরা একের পর এক জিনিসপত্র আনতে লাগল। এমনকি আমি দেখলাম, শস্যে ও কাপড়চোপড়ে দুটি স্তূপ হয়ে গেছে এবং দেখলাম, (আনন্দে) রাসূল (সা.)-এর চেহারা ঝলমল করছে, যেন তা স্বর্ণে মোড়ানো। অতঃপর রাসূল (সা.) বলেন, ইসলামে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজ চালু করল সে এর সওয়াব তো পাবেই, তার পরের লোকেরা যারা এ নেক কাজের ওপর আমল করবে তাদেরও সমপরিমাণ সওয়াব সে পাবে। অথচ এদের সওয়াব কিছু কমবে না। আর যে ব্যক্তি ইসলামে কোনো মন্দ রীতির প্রচলন করল, তার জন্য তো এ কাজের গুনাহ আছেই। এরপর যারা এ মন্দ রীতির ওপর আমল করবে তাদের সমপরিমাণ গুনাহও তার ভাগে আসবে, অথচ এতে আমলকারীদের গুনাহ কম করা হবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ২২৪১)
বিএসডি/আইপি