নিজস্ব প্রতিবেদক:
গতকাল দুপুরে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘অগ্নিসন্ত্রাসের আর্তনাদ : বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের খন্ডচিত্র’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, বিএনপি আবারও সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের পথ বেছে নিলে বরদাস্ত করা হবে না। সুস্থ রাজনীতিতে সরকারের আপত্তি নেই। তবে সাধারণ মানুষের ওপর কেউ চড়াও হলে তা সহ্য করা হবে না। অনুষ্ঠানের শুরুতে ২০১৩-১৪ সালে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতার ওপর আওয়ামী লীগ নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। প্রামাণ্যচিত্রটি দেখার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব ঘটনায় নিহতদের পরিবার ও আহতদের সঙ্গে কথা বলেন। শোনেন তাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা। এ সময় অশ্রুসজল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে বিমর্ষ দেখা যায়।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন আহত ও মৃত ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্য এবং পঁচাত্তর-পরবর্তী সময়ে সামরিক আদালতে ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর সদস্যদের স্বজনরা। এদের মধ্যে রয়েছেন খোদেজা নাসরিন আক্তার, সালাউদ্দিন ভূইয়া, মায়া বেগম, রফিকুল ইসলাম, নাসরিন আরা, বিনা সুলতানা। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রিসবার সদস্যরা ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন কূটনৈতিক মিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩-১৪ সালে দেশের ৩ হাজার ৬০০ মানুষ বিএনপি-জামায়াতের হামলার শিকার হয়েছে। বিএনপির বিচার করতে হচ্ছে না। প্রকৃতিই তাদের বিচার করছে। আগুন সন্ত্রাস মানবতাবিরোধী অপরাধ। এসব অপরাধের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, বিচার হচ্ছে। এমনকি যারা হুকুম দিয়েছে সেই হুকুমের আসামিদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে। আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের শান্তি, কল্যাণ ও উন্নয়ন চায় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে। ভবিষ্যতে কেউ যেন আর আগুন সন্ত্রাস ঘটাতে না পারে। দল-মত নির্বিশেষে যেই হোক, এ দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। ভবিষ্যতে অগ্নিসন্ত্রাসের মতো ঘটনা যাতে না ঘটে এ জন্য দেশবাসীকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে কেউ ঘটাতে না পারে, দলমত নির্বিশেষে সে যেই হোক। যারা ধ্বংসাত্মক কাজ করতে পারে ও কষ্ট দিতে পারে, তাদের পাশে মানুষ কীভাবে দাঁড়ায় সেই প্রশ্ন করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমি জানি না মানুষ আবার এদের পাশে কীভাবে দাঁড়ায়? কীভাবে সমর্থন করে? বাংলাদেশে বিশৃঙ্খলা চান না বলে জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, আমরা শান্তি চাই। দেশের উন্নতি ও মানুষের কল্যাণ চাই। দেশের প্রত্যেকটা মানুষের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। সেই অধিকার সংরক্ষণ করার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তো এই কথা কখনো স্বপ্নেও ভাবিনি পেট্রোলবোমা দিয়ে অথবা অগ্নিসন্ত্রাস করে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে। সেটা কী আন্দোলন! অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের স্বজন ও আহতদের বক্তব্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কান্না, যন্ত্রণা ও বেদনা আজ দেখেছেন। আমি স্বজনহারা, একদিনে বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছিলাম। এদের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি তাদের পাশে দাঁড়াতে। চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা যতটুকু পারি করেছি। কিন্তু যে মানুষগুলো আপনজন হারিয়েছে, তাদের ব্যথা, কষ্ট ও বেদনা তো দূর করা সম্ভব না। আগুনে পুড়ে অনেকের স্বপ্ন-আকাক্সক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান তিনি।
দেশবাসীর উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই দুঃসময়ের কথা যেন কেউ ভুলে না যায়। অগ্নিসন্ত্রাসে নিহতদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি আহতদের জন্য সাধ্যমতো কাজ করে যাবেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এটাই আমার দায়িত্ব। কত যে লাশ টানতে হয়েছে। কত মানুষকে সহযোগিতা করতে হয়েছে। কত মানুষের যে চিকিৎসা দিতে হয়েছে তার শেষ নাই। আওয়ামী লীগ সরকার পরিচালনার পর থেকে দেশে স্থিতিশীলতা এসেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নতি যতটুকু সম্ভব আমরা করে যাচ্ছি। যেটুকু কাজ করে যাচ্ছি মানবকল্যাণে।
কিন্তু তারই মাঝে এই ধরনের আঘাত চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন করা। অগ্নিসন্ত্রাসী ও তার মদদদাতাদের বিচার এমনিই হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বিচার বোধহয় আল্লাহর তরফ থেকেই হবে। হয়তো প্রত্যেক মামলার বিচার চলছে না। কিন্তু যারা অগ্নিসন্ত্রাসের সঙ্গে জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে মামলা আছে। বিচারের কাজ চলছে। অনেকেই শাস্তি পাচ্ছে। ভবিষ্যতেও পাবে। কিন্তু যারা হুকুমদাত্রী বা হুকুমদাতা তাদের কথাও আপনারা ভেবে দেখেন।
বিএসডি/এফএ