১৩ বছরেও সংস্কার হয়নি বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি নায়ক মান্নার কবর। টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গার বাগানবাড়ির নিজ পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হলেও হয়নি সেটি পাকাকরণ। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি কোনো কর্মসূচি ছাড়াই কেটে গেছে ১৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। এতে চরম ক্ষোভ আর হতাশা প্রকাশ করেছেন মান্না ভক্তরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, পারিবারিক কবরস্থানে সারিবদ্ধভাবে রয়েছে নায়ক মান্নাসহ তার মা-বাবা, বোন, দাদি আর চাচার কবর। মাটির ওই কবরগুলোতে নেই কারো কোনো নামফলক। কবরের আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে এক চাচা ও চাচাতো ভাইয়ের ভবন নির্মাণের নানা সামগ্রী। রয়েছে মাটির স্তূপ।
মান্নার কবর দেখতে আসা পারভেজ (৩২) নামের এক ভক্ত বলেন, ‘মান্না ছিলেন টাঙ্গাইলের গর্ব। ১৩ বছর আগে মারা গেছেন। তবে এখনও তার কবরটি পাকা হয়নি। এটি খুবই দুঃখজনক। আমি তার ভক্ত হিসেবে দ্রুত কবরটি দ্রুত পাকা করার দাবি জানাচ্ছি।’
স্থানীয় ভক্ত মিল্টন (২৮) বলেন, ‘বাংলা চলচ্চিত্রের অমর এক নক্ষত্রের নাম নায়ক মান্না। তিনি আমাদের গ্রামের ছেলে হলেও তার অভিনীত সিনেমা দেখতে দেখতে তার ভক্ত হয়ে যাই। তবে এত বড় মাপের একজন অভিনেতার সমাধিস্থল এভাবে থাকতে পারে না।’
তিনি আরও বললেন, তার মৃত্যুবার্ষিকীতে কোনো কর্মসূচি পালন করা হয় না। এটা মেনে নেয়ার মতো নয়। এতে মান্নার ভক্তরা খুবই ব্যথিত।’
সাব্বির (২৩) নামের এক কলেজপড়ুয়া ভক্ত ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নায়ক মান্না দেশের কৃতিসন্তান। অথচ তার কবর অযত্নে পড়ে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টাঙ্গাইলের সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উচিত স্থানীয়ভাবে মান্নার জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা। তা না হলে এ জেলার গুণীজনরা সম্মান থেকে বঞ্চিত হবেন।’
মান্নার পারিবারিক বাড়ির কেয়ারটেকার আদর আলী জানান, প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মান্নার ভক্তরা কবর দেখার জন্য আসেন। তবে তার স্ত্রী ও পুত্র এখানে বেশি আসেন না। সব ভক্ত এসেই কবরটি সংস্কারের দাবি জানান।
মান্নার ফুফু চামেলী বেগম বলেন, ‘মান্নার বাবা নুরুল ইসলাম তালুকদার, মা হাসনা বেগম ও দাদিসহ তার আরেক ভাই ও এক বোনের কবর রয়েছে এখানে। আপন বলতে ওর পরিবারের এক বোনের মেয়ে জীবিত আছে। সে মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কিছুদিন আগে এসে কবর জিয়ারত ও এতিমদের খাবার পরিবেশন করে গেছে। মান্নার ছেলে সিয়াম তালুকদার আমেরিকায় থাকেন এবং স্ত্রী বিমানে চাকরি করেন। তবে করোনার কারণে এখন মান্নার ছেলে ও বউ ঢাকায় বসবাস করছে। মৃত্যুবার্ষিকীতে তারাও এসেছিল।’
তিনি বলেন, ‘পারিবারিক কবরস্থানে মান্নাকে দাফন করা হয়েছে। তবে পারিবারিক নানা কারণে এখনও কবরটি পাকা করা হয়নি। দ্রুতই কবরটি সংস্কার করা হবে।’
টাঙ্গাইলে মান্নার নামে একটি হলেও স্থাপনা প্রতিষ্ঠা এবং সড়কের নামকরণ করার দাবি জানিয়েছেন ফুফু চামেলী বেগম। পাশাপাশি তার কর্মময় স্মৃতি ধরে রাখতে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নেয়ারও দাবি জানান তিনি।
১৯৬৪ সালের ১৪ এপ্রিল টাঙ্গাইলের সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন চিত্রনায়ক এস এম আসলাম তালুকদার মান্না। তিনি মাধ্যমিক পাস করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। ১৯৮৪ সালে এফডিসির নতুন মুখের সন্ধান কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন মান্না। তার অভিনীত প্রথম চলচিত্র ‘তওবা’। এরপর একের পর এক ব্যবসা সফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে নিজেকে সেরা নায়ক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
চলচ্চিত্র জীবনে প্রায় তিন শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন নায়ক মান্না। তার সিনেমায় বঞ্চিত-নিপীড়িত মানুষের কথা উঠে এসেছে। জীবদ্দশায় অনেক সুপারহিট চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছেন তিনি। এ কারণে বাংলা সিনেমার দর্শকের মনে আজও তার স্থান করে রেখেছেন মান্না।
২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান নায়ক আসলাম তালুকদার মান্না।