নিজস্ব প্রতিবেদক:
সাম্প্রদায়িক সহিংসতাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক মামলা হয়েছে। গ্রেফতার হয়েছেন সাত শতাধিক। এসব মামলায় আসামি এবং গ্রেফতারকৃত বেশিরভাগই বিএনপির নেতাকর্মী। গ্রেফতার আতঙ্কে অনেকেই এলাকা ছাড়া। শুধু তৃণমূল নেতাকর্মী নন, কেন্দ্রীয় একাধিক নেতাও আছেন গ্রেফতার আতঙ্কে।
এবার দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লার নানুয়া দীঘিরপাড়ে অস্থায়ী মণ্ডপে কুরআন শরিফ রাখাকে কেন্দ্র করে ১৩ অক্টোবর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা হয়। পরে তা চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, রংপুর, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। এতে হতাহতের ঘটনাও ঘটে। ঘটনার পর থেকে দেশের প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে শুরু হয় দোষারোপের রাজনীতি। সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ইন্ধনদাতা হিসাবে বিএনপিকে দায়ী করে বক্তব্য দিচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের নেতারা। অন্যদিকে সরকারের মদদেই এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে দাবি বিএনপির।
সাম্প্রদায়িক সহিংসতার বিরুদ্ধে দেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অবিলম্বে দোষীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানায় বিভিন্ন সংগঠন। সরকারও এ ইস্যুতে কঠোর অবস্থান নেয়। পেছনের ইন্ধনদাতাদের খুঁজে বের করতে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন্ন জেলায় সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১২৩টি মামলায় প্রায় ২০ হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় ইতোমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন সাত শতাধিক।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী জানান, তারা আগামী দিনে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও পেশাজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়ে করেছে দলটির হাইকমান্ড। ওইসব বৈঠকের মতামত নিয়ে একটা খসড়া তৈরি করা হয়েছে। তা নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হবে। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতও নেবে বিএনপি। এরপর চূড়ান্ত করা হবে আন্দোলনের রূপরেখা। পাশাপাশি সারা দেশে তৃণমূল পুনর্গঠনেও ব্যাপক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে সব মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দল গোছানোর কাজও শুরু হয়েছে।
দলটির একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, বিএনপি যখন আন্দোলনের প্রস্তুতি ও দল গোছানোর কাজ শুরু করেছে ঠিক সেই মুহূর্তে নেতাকর্মীদের আবার মামলা জালে আটকানোর জন্য সরকার পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসেছে।
কারা এ সংঘর্ষের সঙ্গে জড়িত তা নিশ্চিত হওয়ার আগেই নেতাকর্মীদের নামে দেওয়া হয়েছে মামলা। অনেক এলাকায় মামলার আগেই নেতাকর্মীদের আটক করা হয়েছে। এসব মামলায় বিএনপিকে জড়ানোর কৌশল হিসাবে অসংখ্য অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। যাদের নামে মামলা নেই তাদেরও আটক করে এ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা দেশে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক সহিংসতার পেছনে ক্ষমতাসীনদের মদদ রয়েছে। সরকারের এজেন্টরাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েক জায়গায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা গ্রেফতারও হয়েছেন। কিন্তু নিজেদের অপকর্ম আড়াল করতে তারা এখন বিএনপির ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।
সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে তৃণমূলের পাশাপাশি বিএনপির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতাও নজরদারিতে রয়েছেন। ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসাবে তাদেরও গ্রেফতার করা হতে পারে বলে গুঞ্জন রয়েছে। কুমিল্লার ঘটনার পর দলের কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমানকে জড়িয়ে একটা অডিও ভাইরাল করা হয়। যদিও ওই অডিওকে মিথ্যা বানোয়াট এবং সুপার এডিটেড বলে দাবি করেছে বিএনপি। এদিকে নোয়াখালীর সংঘর্ষের ঘটনায় ইতোমধ্যে ২৫টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনেককে নেওয়া হয়েছে রিমান্ডে।
মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলাম দাবি করেন, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার চৌমুহনীতে বিভিন্ন মন্দিরে হামলা ও সহিংসতার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি ফয়সাল ইনাম কমল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। এ ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান বরকতুল্লাহ বুলুসহ বিএনপি-জামায়াতের ১৫ নেতার সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
পুলিশের এমন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন বরকতুল্লাহ বুলু বলেন, নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পেছনে সরকারের ইন্ধন রয়েছে। তারা উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপানোর কৌশল হিসাবে এখন বিএনপিকে এসব ঘটনায় জড়ানোর ষড়যন্ত্র করছে। অথচ ঘটনার পর আমাদের নেতাকর্মীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মিলে দুষ্কৃতকারীদের প্রতিহত করেছে। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেককে আশ্রয় দিয়েছে। যারা সহিংসতা নিরসনে মাঠে ছিলেন সেসব নেতাকর্মীর নামে উল্টো মামলা দেওয়া হয়েছে। সেজন্যই আমি শুরু থেকেই এ ঘটনা তদন্তে বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু সরকার সেদিকে গুরুত্ব না দিয়ে বিএনপিকে ঘায়েলে মনগড়া তত্ত্ব প্রকাশ করছে। প্রকৃত অপরাধীদের আড়াল করতে সরকারের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন এসব করছে বলে দাবি করেন তিনি।
বিএসডি /আইপি