নিজস্ব প্রতিবেদক:
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামে মাকে দাফন করতে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বড় ছেলের বিরুদ্ধে। পরে ঘটনাস্থলে পুলিশসহ স্থানীয়রা হস্তক্ষেপ করলে দাফন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তার দাফন সম্পূর্ণ হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে এমন ঘটনা ঘটে। স্থানীয়রা ঘটনাটিকে অমানবিক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
মৃত্যুবরণ করা নারীর নাম মালেকা বেগম (৬৫) শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্ব খণ্ড গ্রামের মৃত এম এ মান্নানের স্ত্রী। তার বড় ছেলে অশিন প্রি-ক্যাডেট স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইকবাল হোসেন ও ছোট ছেলে আমিনুল ইসলাম।
স্থানীয়রা জানান, প্রায় ২৮ বছর আগে ইকবাল ও আমিনুলের বাবা এম এ মান্নান চার ছেলে ও তিন মেয়ে রেখে মারা যান। বাবার মৃত্যু পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে সন্তানদের মধ্যে কলহ সৃষ্টি হয়। মায়ের নামে জমির স্বত্ব। ছোট ভাই আমিনুলকে লিখে দেওয়া হয়েছে, এমন কথায় তাদের বিরোধ আরও চরম আকার ধারণ করে এবং মা মালেকা বেগমের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটে। এরপর থেকেই মালেকা বেগম ছোট ছেলে আমিনুলের সঙ্গে থাকতেন এবং আমিনুলও তার দেখভাল করতেন।
আমিনুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন আমিই মায়ের দেখভাল করে আসছি। পরে হঠাৎ মা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাই। সেখানে নানা পরীক্ষায় মা করোনায় আক্রান্ত ছিলেন বলে জানানো হয়। বুধবার রাতে হাসপাতালে করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মা মৃত্যুবরণ করেন। বাড়িতে মায়ের লাশ নিয়ে আসার পরই আমার বড় ভাই পুলিশ নিয়ে এসে মায়ের লাশ দাফনে বাধা দেন। যদিও স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে শেষে মাকে দাফন করি।
তিনি আক্ষেপ করে জানান, তাদের মা-বাবা খুব আদর-যত্ন করে, খেয়ে না-খেয়ে তাদের মানুষ করলেন। সেই সন্তানটি শেষবারের মতো মায়ের মুখ পর্যন্ত দেখলেন না। সবাই যখন দাফন-কাফনে ব্যস্ত, তখন বড় ছেলে পরিবার নিয়ে ঘরে বসে দাফনে আটকাতে ব্যস্ত রইলেন। মায়ের কবরে এক মুঠো মাটি পর্যন্ত দিলেন না। তার মা অসুস্থ হওয়ার পর তাকে একনজর দেখতে চেয়েছিলেন। একাধিক লোক দিয়ে খবর পর্যন্ত পাঠিয়েছিল। কিন্তু মায়ের সেই ডাকে সাড়া দেননি বড় ছেলে।
এ বিষয়ে বড় ছেলে ইকবাল হোসেন জানান, মায়ের রেখে যাওয়া সম্পদ আত্মসাৎ করতেই ছোট ভাই আমিনুল তার মাকে হত্যা করেছেন। তার মায়ের নামে প্রায় দুই বিঘা সম্পত্তি। কয়েক লাখ টাকার স্বর্ণালংকার ও ব্যাংকে অর্ধ কোটি টাকা ছিল। এগুলো আত্মসাৎ করতেই ছোট ভাই তার মাকে মেরে ফেলেছেন, এমন দাবি করে তিনি থানায় অভিযোগ করেছিলেন।
তবে পুলিশ লাশের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা না করেই চলে গেছে। তিনি যদি কোনো আইনগত সহায়তা না পান, তাহলে তিনি আদালতের দারস্থ হবেন।
এ নিয়ে স্থানীয় এলাকাবাসীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছিল। তারা বলেন, সম্পদের জন্য এভাবে সন্তান তার মায়ের দাফনে বাধা তৈরি করবেন, এটা সত্যিই ঘৃণীত কাজ। আমরা এলাকাবাসী হিসেবেও এমন কাণ্ডে লজ্জিত। তারা আরও বলছেন, সবচয়ে বড় কথা সন্তান একজন শিক্ষিত। একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। এখানে তার শিক্ষাটা অন্তত পরাজিত হয়েছে।
শ্রীপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, থানায় করা মরহুমার বড় ছেলের লিখিত অভিযোগে ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখা হয়েছে। কাগজগুলো দেখে প্রাথমিকভাবে কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ও স্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ঘটনাটি যেহেতু ঢাকার একটি হাসপাতালের, তাই অভিযোগকারীকে সংশ্লিষ্ট থানায় গিয়ে পরামর্শ করতে বলা হয়েছে।
বিএসডি/আইপি