রাজশাহী ব্যুরো:
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে কটূক্তির প্রতিবাদে রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালি পৌরসভার মেয়র আব্বাস আলীকে ‘খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা’ বলে আখ্যায়িত করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ। তাকে অবিলম্বে দল থেকে বহিষ্কার এবং মেয়র পদ থেকে অপসারণেরও দাবি জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় মহানগরীর কুমারপাড়ায় দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার এ মন্তব্য করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সারাবিশ্ব বঙ্গবন্ধুর দর্শন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা পরিচালনা করছে ঠিক সেই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা আব্বাসের এ ধরনের ঘৃণ্য মন্তব্য দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত, রাজনৈতিক পরিবেশকে অস্থিতিশীল করাসহ দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও আওয়ামী লীগের ঐক্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টার অংশ। খুনি মোশতাকের প্রেতাত্মা আব্বাসের মতো কুচক্রী ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর অশুভ তৎপরতা থেকে সতর্ক থাকার জন্য সবার প্রতি আহবান জানাচ্ছি।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটূক্তি ও অশোভন মন্তব্য করা রাষ্ট্রদ্রোহিতার শামিল উল্লেখ করে ডাবলু সরকার বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আব্বাসের কটূক্তি ও অবমাননাকর মন্তব্যে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ চরমভাবে মর্মাহত। তার ধৃষ্টতাপূর্ণ অশালীন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে মহানগর আওয়ামী লীগ তাকে সংগঠনের পদ ও প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।
ছড়িয়ে পড়া একটি অডিওতে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনকে নিয়েও আপত্তিকর কথা রয়েছে।
সে প্রসঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, মেয়র লিটন রাজশাহী মহানগরীকে সুসজ্জিত করার লক্ষ্যে মহানগরীর মূল প্রবেশ দ্বারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালকে নিয়ে আব্বাসের অবমাননাকর মন্তব্য জাতি সমর্থন করে না। তার এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে ইন্ধন জোগাবে বলে মনে করে মহানগর আওয়ামী লীগ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান বাদশা, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, নওশের আলী, আবুল খায়ের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক মীর ইশতিয়াক আহমেদ লিমনসহ মহানগর আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
এদিকে একই দাবিতে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের এমপি আয়েন উদ্দিন সংবাদ সম্মেলন করেছেন। মহানগরীর একটি অভিজাত রেস্তোরায় বৃহস্পতিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে এমপি আয়েন বলেন, স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ নিয়ে মেয়র আব্বাস মন্তব্য করে চরম ধৃষ্টতা দেখিয়েছেন। আব্বাসকে কাটাখালি পৌরসভা আওয়ামী লীগের আহবায়কের পদ থেকে ইতোমধ্যে অপসারণ করা হয়েছে। তাকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এরপর তাকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে মেয়র আব্বাসকে অতিদ্রুত দল থেকে বহিষ্কার, মেয়র পদ থেকে অপসারণ এবং গ্রেফতারের দাবিতে মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মহানগর আওয়ামী লীগ।
উল্লেখ্য, সোমবার থেকে রাজশাহীতে দুটি অডিও ক্লিপ ছড়িয়ে পড়ে। এতে মেয়র আব্বাস আপত্তিকর মন্তব্য করেন। এ নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড় চলছে। চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচিও। ইতোমধ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর উপজেলা আওয়ামী লীগ আব্বাসকে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে।