আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
দক্ষিণ আফ্রিকার অবিসংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলার কারাকক্ষের চাবির নিলাম বন্ধের দাবি জানিয়েছে দেশটি।
নেলসন ম্যান্ডেলা তার ২৭ বছরের দীর্ঘ কারাবাসে রবেন দ্বীপের যে কারাগারের বেশি সময় কাটিয়েছেন সেই কারাকক্ষের চাবিটি নিলামে তুলতে যাচ্ছে নিউ ইয়র্কের একটি নিলাম হাউস।
নিউ ইয়র্কের গার্নসির নিলাম ঘর আসছে জানুয়ারিতে কারাকক্ষের চাবিটি নিলামে তুলতে যাচ্ছে। ওই কারাগারে সাবেক কারারক্ষী ক্রিস্টো ব্র্যান্ড ওই চাবিটি বিক্রির জন্য নিলামে হাউসে দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতিমন্ত্রী নাথি মেথওয়া বলেছেন, ‘সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। এই চাবিটি দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণের। এটি কারও ব্যক্তিগত বিষয় নয়।’
গার্নসির জানিয়েছে, আগামী ২৮ জানুয়ারি চিবিটি নিলামে তুলবে তারা। নিলামের টাকায় ম্যান্ডেলার সমাধি সৌধেরর পাশে একটি বাগান ও মিউজিয়াম নির্মাণ করবে ম্যান্ডেলার স্মৃতির উদ্দেশ্যে।
প্রসঙ্গত, ম্যান্ডেলার জন্ম ১৯১৮ সালের ১৮ জুলাই ট্রান্সকির প্রত্যন্ত গ্রাম ভেজোতে। তার বাবা হেনরি ছিলেন টেম্বু গোত্রপ্রধান। জন্মের পর বাবা তার নাম রাখেন রোহিলাহলা, যার অর্থ ‘ট্রাবল মেকার’। ম্যান্ডেলার গোত্রনাম হচ্ছে মাদিবা। দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ ভালোবেসে তাকে মাদিবা নামে ডাকে।
বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে আজীবন লড়াইয়ের জন্য এ বিশ্বনেতার জন্মদিনকে ‘ম্যান্ডেলা ডে’ হিসেবে উদ্যাপন করা হয়। ২০০৯ সালের নভেম্বর জাতিসংঘ ১৮ জুলাই ম্যান্ডেলার জন্মদিনকে আনুষ্ঠানিকভাবে ম্যান্ডেলা ডে হিসেবে ঘোষণা করে।
ম্যান্ডেলার জীবন ছিল বৈচিত্র্যময়। ছিলেন রাখাল, মিশনবয়, খনি পুলিশ, ল ফার্মের কেরানি, মুষ্টিযোদ্ধা, আইনজীবী, রাজনৈতিক কর্মী, গেরিলাযোদ্ধা, বিপ্লবীনেতা এবং রাষ্ট্রনায়ক।
১৯৬২ খ্রিস্টাব্দে তাকে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকার গ্রেপ্তার করে ও অন্তর্ঘাতসহ নানা অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। ম্যান্ডেলা ২৭ বছর কারারুদ্ধ ছিলেন। এর অধিকাংশ সময়ই তিনি ছিলেন রবেন দ্বীপে। ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি কারামুক্ত হন।
বর্ণবাদের অবসানের পর ১৯৯৪ সালের ১০ মে নতুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন নেলসন ম্যান্ডেলা।
নেলসন ম্যান্ডেলা ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং আকর্ষণীয় রাষ্ট্রনায়কদের একজন, যিনি দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবাদের অবসান ঘটিয়ে বহু বর্ণ ভিত্তিক গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। আফ্রিকান ন্যাশনাল কংগ্রেসের সশস্ত্র সংগঠন উমখন্তো উই সিযওয়ের নেতা হিসাবে বর্ণবাদবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহন ছিল ম্যান্ডেলা।
বর্ণবাদের অবসানের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেলসন ম্যান্ডেলার শপথ এক নতুন মাইল ফলক। এর মাত্র এক দশক আগেও সংখ্যালঘু শ্বেতাঙ্গ শাসিত দক্ষিণ আফ্রিকায় এই রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ছিল এক অকল্পনীয় ঘটনা। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন নেলসন ম্যান্ডেলা। শুধু দক্ষিণ আফ্রিকায় নয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও তিনি ভূমিকা রাখেন। ১৯৯৩ সালে তাকে শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়।
২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর গোটা দুনিয়ার কোটি কোটি ভক্তকে ছেড়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান এ কিংবদন্তী। এ সময় তার বয়স ছিল ৯৫ বছর।
বিএসডি/এসএফ