সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার শুরু করেন। সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে দেশটিতে পুনরায় ইসলামি চরমপন্থা তৈরি না হতে ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী সন্ত্রাসবাদ রুখতে এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি গড়ার ঘোষণা দিয়েছে পেন্টাগন। জল্পনা চলছে, সামরিক এ ঘাঁটি গড়ার সুযোগ করে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ঝুঁকছে পাকিস্তান। দেশটি এর মাধ্যমে উভয় দেশের সামিরক বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের পথ খুঁজছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগন নিশ্চিত করেছে, যুক্তরাষ্ট্র ঘাঁটি তৈরির ব্যাপারে পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনা করছে। আফগানিস্তান মিশনে ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ওভারফ্লাইট এক্সেস’ দিয়েছে ইসলামাবাদ। এর দ্বারা বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে সঙ্গে নতুনভাবে সম্পর্ক উন্নয়নে পাকিস্তানের ইচ্ছা রয়েছে। সম্প্রতি পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কোরেশী যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করে বিস্তৃত পরিসরে কৌশলগত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে ইসলামাবাদের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
তালেবান নেতৃত্বাধীন আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর এ ঘাঁটি চীন ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভূর্জ বেষ্টনী তৈরি করবে। যদিও এই অঞ্চলে তাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত করে কিছু জানায়নি। তবে পেন্টাগনের ঘোষণায় পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রকে ওই সুবিধা দিতে মূখ্য ভুমিকা পালনকারী হিসেবে আবিভূর্ত হয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে ঘাঁটি ব্যবহারের সুযোগ দিতে উভয় দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে কোনো নতুন চুক্তি হয়নি বলে পাকিস্তান পররাষ্ট্র দপ্তর প্রকাশ্যে জানিয়েছে। গত ১১ মে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ কোরেশী বলেন, ‘পাকিস্তানের মাটিতে বিদেশিদের পদচিহ্ন কিংবা এই অঞ্চলে সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হবে না।’ তবে একই সময়ে বলা হয়, ‘২০০১ সালে মার্কিন বাহিনীর জন্য স্থল ও আকাশপথে সহায়তা দিয়ে যেসব চুক্তি হয়েছিল তা অব্যাহত থাকবে।’
সুপ্তভাবে ওই চুক্তি পুনরায় চালু রাখা পাকিস্তানকে আরও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত করে তুলছে। এর ফলে আর্থিক সহায়তার নতুন কৌশল এবং কৌশলগত সুবিধা পাবে পাকিস্তান। ওই ‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’ চলাকালীন একই বিমান সংযোগ (এএলওসি) এবং যোগাযোগের গ্রাউন্ড লাইনস (জিএলওসি) ছিল যা উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক সামরিক সহযোগিতার সুযোগ করে দিয়েছিল। এই চুক্তি অব্যাহত থাকলে পাকিস্তানের শামসি বিমান ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র ড্রোন বিমান ওড়াতে পারবে। এর ফলে বেলুচিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আফগান জঙ্গিদের ওপর আঘাত হানতে পারবে মার্কিন বাহিনী।
২০১১ সালে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো বাহিনী পাকিস্তানের দুটি সীমান্ত চৌকিতে গুলি চালিয়েছিল। এতে ২৮ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। ওই ঘটনার পর পাকিস্তানে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয়। পাকিস্তানিরা মার্কিন বাহিনীকে শামসি বিমানঘাঁটি খালি করতে বলেন। তারা পাকিস্তানে ন্যাটোর কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেন। ওই ঘটনাটি কুখ্যাত সালালার ঘটনা হিসেবে এখন পরিচিত।
পরবর্তীতে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেন পাকিস্তানের একটি সামরিক ঘাঁটির কাছেই আত্মগোপনে রয়েছেন- এমন খবরে মার্কিন বাহিনী গোপনে তাকে হত্যার মিশন চালায়। এর ফলে নতুন করে প্রশ্ন ওঠে পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব নিয়ে। এ ঘটনার পর পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যে কৌশলগত সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছে যৌক্তিকভাবে এখনো তার উন্নয়ন ঘটেনি।
‘সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধ’র সহযোগিতা সমুন্নত রাখায় ২০০৪ সালে পাকিস্তান ‘ন্যাটো ছাড়াই’ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র হিসেবে পরিণত হয়। এর ফলে সামরিক ও আর্থিক খাতে পাকিস্তানের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার পথ নিশ্চিত হয়। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের নানা সুবিধার পথও পাকিস্তানের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। ১৯৯৯ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে পাকিস্তান আইএমএফ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে মোট ২৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ ও অনুদান নিয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে পাকিস্তান ৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার বেলআউট প্যাকেজসহ ১৪ বিলিয়ন ডলার নেয় দেশটি।