আজ ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস। ১৯৮৭ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সভায় ২৬ জুনকে আন্তর্জাতিক মাদক বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশে পালন হয়ে আসছে। মাদক একটি ভয়াবহ সামাজিক ব্যাধি। যে সমস্ত প্রাকৃতিক দ্রব্য বা রাসায়নিক দ্রব্য গ্রহণ করার ফলে একজন মানুষের মনের অনুভূতি এবং চিন্তা চেতনার স্বাভাবিক অবস্থা থেকে অস্বাভাবিক অবস্থায় রুপান্তর হয় তাকে মাদক বলে। মাদকাসক্ত ব্যক্তি দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ। কেননা মাদকাসক্ত ব্যক্তিরা মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকে।মাদকাসক্ত অবস্থায় তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। ভালো মন্দ বুঝার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। বর্তমান পৃথিবীতে এটি সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমান সারাবিশ্বে কয়েকটি মাদক উৎপাদনকারী বলয় রয়েছে। যেমন পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরান, তুরস্ক এবং আশেপাশের অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে গোল্ডেন ক্রিসেন্ট। আবার গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গুল গড়ে উঠেছে লাওস, থাইল্যান্ড এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চল গুলোকে নিয়ে। আর এই দুয়ের মধ্যবর্তী অঞ্চল নিয়ে গড়ে উঠেছে গোল্ডেন ওয়েজ নামক অঞ্চল। এছাড়াও ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কলম্বিয়া, ব্রাজিল, বলিভিয়া, মেক্সিকো, পেরু, প্যারাগুয়ে এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় মাদক উৎপাদন হয়৷ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারনে বাংলাদেশ মাদক পাচারের ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে মাদক আসে মূলত সীমান্তবর্তী দেশগুলো ভারত, মায়ানমার এসব দেশ থেকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন আইন থাকলেও মাদকের ভয়াবহ গ্রাস থেকে যুব সমাজকে রক্ষা করা যাচ্ছে না। এর অন্যতম কারন হচ্ছে মাদকের সহজলভ্যতা ও অসচেতনতা।বাংলাদেশে মাদকের বিস্তার দিন দিন বেড়েই চলছে যা জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের দ্বিগুন।
এদেশর প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন মানুষ এখন মাদকাসক্ত যার অধিকাংশই তরুন এবং শতকরা হিসেবে প্রায় ৮৫ ভাগ মাদকসেবীর বয়স ১৫-১৯ বছর। তবে এর কম বয়সের শিশুরাও এখন মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এসব তরুন ও যুবকরা বিভিন্ন কারনে মাদকের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে।
যেমনঃ ১. মাদকের সহজলভ্যতা ২. বন্ধুদের চাপে পড়ে অনেক সময় মাদক গ্রহন করা ৩. বাবা মায়ের দাম্পত্য কলহ ৪. চরম হতাশা বা একাকীত্ব ৫.
ভালোবাসার সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে মানসিক কষ্ট থেকে পরিত্রানের জন্য ৬. পারিবারিক কারনেও অনেক সময় মাদকে আসক্ত হতে। এছাড়া মাদক গ্রহনে স্নায়ুউত্তেজনা বাড়ার কারনে মূলত অনেকেই সাময়িক সুখের কারনে গ্রহণ করে থাকে। কিন্তু এর প্রভাব সারাজীবন বয়ে যেতে হয় হয়। মাদকাসক্তির কুফল বহুমুখী এর ফলে শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক ক্ষতির পাশাপাশি রাষ্ট্র সমাজ অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাব ফেলে। এর ফলে মাদক সেবীর স্মৃতি শক্তি লোপ পায়, কর্মক্ষমতা হ্রাস পায়, স্নায়ুতন্ত্র দূর্বল হয়ে পড়ে, জীবনীশক্তি হ্রাস পায়, স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায় । এমনকি এর কারনে মাদক সেবী ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এই যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল থাবা থেকে রক্ষা করার জন্য আমাদের সমাজ রাষ্ট্রের অনেক কিছু করার আছে। তারা যাতে মাদকে আসক্ত না হয় এজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে যেমন –
১.ছোট বেলা থেকেই শিশু কিশোরদের মানসিক বিকাশের জন্য ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
২. তাদের পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা মূলক কার্যক্রমে যুক্ত করতে হবে।
৩. পর্যাপ্ত খেলাধুলার ব্যাবস্থা করতে হবে।
৪. তাদের সহপাঠীদের উপরও নজর রাখতে হবে তারা কোনো বিপথে যাচ্ছে কিনা।
৫.পাড়া মহল্লায় পাঠাগার তৈরি করে বই পড়ার প্রতি আগ্রহ জাগিয়ে তুলতে হবে।
৬. যুবকদের কারিগরি শিক্ষায় যুক্ত করতে হবে।
৭. যুবকরা যাতে বেকার না থাকে এজন্য তাদের আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে হবে কেননা বেকারত্ব ও অন্যতম কারন।
তবে মাদকসেবীর প্রতি আমাদের সকলের সহানুভূতির থাকতে হবে। কিভাবে একজন মাদক সেবীকে এই ভয়ালগ্রাস থেকে রক্ষা করা যায় এর জন্য কাজ করতে হবে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার দেশে মাদক নিরাময কেন্দ্র তৈরি করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি নিরাময় কেন্দ্র রয়েছে যেখানে অনেক ভালো চিকিৎসা হয়। যা একজন মাদকাসক্তের জন্য খুবই প্রয়োজন। সর্বোপরি মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা পরিবার থেকেই সৃষ্টি করতে হবে এবং এর চোরাচালান রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে।
লেখক- আশরাফুল আলম
শিক্ষার্থী, আইন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
জবি/এ,এ/এম,এম