বর্তমান সময় ডেস্কঃ
মুসলিম উম্মাহর সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে রংপুর জেলা ইজতেমা। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে চোখের পানিতে নিজেদের পাপ মুক্তিসহ বিশ্ব মুসলিমের মঙ্গল ও নির্যাতিত-নিপীড়িত ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা কামনা করে প্রার্থনায় অংশ নেন প্রায় দেড় লাখ মুসল্লি। শনিবার (৪ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় মোনাজাত শুরু হয়ে শেষ হয় ১২টা ৩০ মিনিটে। মোনাজাত পরিচালনা করেন কাকরাইল আহলে শুরার সদস্য মাওলানা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন।এর আগে ফজরের নামাজের পর আম বয়ান শুরু হয়। পরে হেদায়েতি বয়ান শেষে আখেরি মোনাজাত হয়।
এ বছর রংপুর মহানগরীর আলমনগর স্টেশন রোড সংলগ্ন আরডিসিসিএস মাঠ এলাকায় তিন দিনব্যাপী এ ইজতেমার আয়োজন করা হয়েছিল। ২০১০ সাল থেকে রংপুরে ইজতেমা হয়ে আসছে। এবার রংপুরে অষ্টমবারের মতো ইজতেমা সম্পন্ন হলো।
এদিকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে আগের দিন রাত থেকেই রংপুর জেলাসহ আশপাশের জেলার বিভিন্ন এলাকার তাবলিগ জামাতের অনুসারীরা ইজতেমাস্থলে পৌঁছান। এছাড়া শনিবার ভোর থেকে রংপুরের বিভিন্ন এলাকার লোকজন দলে দলে ইজতেমা ময়দানে আসেন। পিকআপ ভ্যান, থ্রি-হুইলার অটোরিকশা, কার-মাইক্রোবাসা, মোটরসাইকেলে যে যেভাবে পারেন ছোটেন ইজতেমাস্থলের দিকে। বেলা ১১টার মধ্যে অরডিসিসিএস মাঠ ছাড়াও আশপাশের তিনটি মাঠে অবস্থান করেন আগতরা। ইজতেমা মাঠের মূল মঞ্চ থেকে আশপাশের সব জায়গা মুসল্লিদের আগমনে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে।
রংপুর নগরীর ৩৩টি ওয়ার্ডসহ জেলার আট উপজেলার তাবলিগ জামাতের অনুসারীসহ বিভিন্ন এলাকার ধর্মপ্রাণ মানুষ এতে অংশ নেন। মোনাজাতের সময় অনেককে মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন বাসা-বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও ভবনের ছাদে অবস্থান করতে দেখা গেছে। আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আসা-যাওয়া নিরাপদ করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য হাফিজুর রহমান জানান, বিশ্ব ইজতেমার ওপর চাপ কমাতে জেলাভিত্তিক আঞ্চলিক ইজতেমা হয়ে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় রংপুরে অষ্টমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো এ ইজতেমা। গত বৃহস্পতিবার বাদ ফজর বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ইজতেমার কার্যক্রম। কোরআন ও হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহ ও নবী-রাসুলের হুকুম-আহকাম মেনে চলার মধ্যেই ইহকাল ও পরকালে সুখ-শান্তি রয়েছে এমন আলোচনা করা হয়।
তিনি আরও জানান, ইজতেমায় রাজধানী ঢাকা ছাড়াও মরক্কো, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ চারটি দেশের তাবলিগের জামাতের বিদেশি মেহমান ও মুরব্বিরা অংশ নেন। তারা তিন দিনের এই ইজতেমায় ঈমান-আমলের বয়ানের মাধ্যমে দ্বীনের দাওয়াতে উদ্বুদ্ধ করেন। এবার রংপুর ইজতেমা থেকে ইসলাম, ঈমান, আমলের শিক্ষা ও আল্লাহর দ্বীন প্রচারের উদ্দেশ্যে প্রায় শতাধিক জামাত বের হবে। এসব জামাতের সাথীরা এক চিল্লা (৪০ দিন) এবং তিন চিল্লা (১২০) পূর্ণ করার নিয়ত করেছেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আমানত আমিন বলেন, লাখো মানুষের উপস্থিতিতে শুক্রবারের জুমার মতো শনিবার ফজরের নামাজও আদায় করা হয়। পরে বেলা বারোটার দিকে আখেরি মোনাজাত শুরু হয়। প্রায় ত্রিশ মিনিটের দোয়া মোনাজাতে লাখো মুসল্লির আমিন ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠেছিল ইজতেমা ময়দান। কান্নায় আকুতিতে আল্লাহর কাছে সবাই নিজের, পরিবারের, সমাজের ও দেশসহ মুসলিম বিশ্বের মঙ্গল, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন।
এদিকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ইজতেমা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন। তিনি জানান, ইজতেমার নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে ইজতেমা আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় তৈরি করা হয়েছিল। যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা, বিশৃঙ্খলা এড়াতে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় ছিলেন। এছাড়া পুলিশের কন্ট্রোল রুম ছিল। সবার সহযোগিতায় সুন্দর, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ইজতেমা শেষ হয়েছে।
বিএসডি/আরপি