রমজান ঘিরে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বেড়েছে দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে। সরবরাহ বাড়ায় দাম কমেছে ছোলা, মসুর ডাল ও মোটরসহ মসলা জাতীয় পণ্যের। তবে দাম বেড়েছে মুগডালের। তবে সিন্ডিকেটের প্রভাবে রমজানের আগে নতুন করে আবার দাম বাড়ে কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ভোক্তারা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশে পণ্য বুকিং থেকে শুরু করে গুদামে আসা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই মাস সময় লাগে। অনেক সময় বন্দর থেকে পণ্য ছাড় করতেও সময়ের প্রয়োজন হয়। এখন থেকে পণ্য গুদামজাত না করলে মার্কেট ধরা কঠিন হবে। ইতোমধ্যে প্রচুর পরিমাণ ছোলা, মটর ও মসুর ডাল আমদানি হয়েছে। এছাড়া গত বছরের অনেক পণ্য গুদামে অবিক্রিত থেকে গেছে। সব মিলিয়ে রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম সহনশীল পর্যায়ে থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, গত ৬ মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৩৯ হাজার ২২৭ মেট্রিকটন। খেজুর আমদানি হয়েছে ৪৪ হাজার ৬৩৪ মেট্রিকটন।
উদ্ভিদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালক মো. শাহ আলম বলেন, গত এক সপ্তাতে ছোলা আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার মেট্রিকটন ও খেজুর আমদানি হয়েছে ৬ হাজার মেট্রিকটন। এরমধ্যে সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলা ও খেজুরের আমদানি বেড়েছে আড়াই থেকে তিন গুণ।
খাতুনগঞ্জে সরেজমিনে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি হওয়া ছোলা মণপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৩৪০০ টাকা। এক সপ্তাহ আগে এই ছোলার বাজার দর ছিল ৩৫০০-৩৬০০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে মসুর ডালের দামও কমেছে কিছুটা। গত সপ্তাহে মসুর ডাল মণপ্রতি ৩৪০০ টাকা বিক্রি হলেও এখন কমেছে ১০০ টাকা। তুরস্ক থেকে আমদানি হওয়া জিরার দাম কমেছে মণপ্রতি ২০০ টাকা। মণপ্রতি জিরা বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে ইউক্রেনে সাদা মটরের দাম কেজিপ্রতি ১ থেকে ২ টাকা কমেছে। খাতুনগঞ্জে মটর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা।
এসব পণ্যের সরবরাহ বাড়ায় দাম নিম্নমুখী বলছেন আড়তদারেরা। এদিকে কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়েছে মুগডালের। পাইকারিতে কেজিপ্রতি মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা।
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, ‘ভোগ্যপণ্য পর্যাপ্ত মজুদ আছে। রমজানে সংকট হবে না।’
খাতুনগঞ্জের মসলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়, কেজিপ্রতি দারুচিনি ৩৮০ টাকা, কিসমিস ৪১০ টাকা, এলাচ মানভেদে ২১শ ৫০ থেকে ২৪শ ৫০টাকা ও লবঙ্গ ১৬শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
খাতুনগঞ্জের ইলিয়াস মার্কেটের মসলা আমদানিকারক মেসার্স হাজী জসিম ট্রেডার্সের ম্যানেজার আশিকুর রহমান জিহান বলেন, ‘রমজান ঘিরে মসলার চাহিদা বাড়ে। সেজন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। আশাকরি বাজারে পণ্যের সংকট হবে না।’
দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে পেঁয়াজ মজুদ হয় খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মার্কেটের আড়তে। এই মার্কেট কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. ইদ্রিস বলেন, বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় দেশি পেঁয়াজের দাম বেশি। তবুও ১০-১৫দিন ধরে চোরাপথে ভারতীয় পেঁয়াজ আসছে। সেগুলো কেজিতে ১০৫ টাকা বিক্রি হচ্ছে বলে শুনতে পাচ্ছি।
রমজানে পেঁয়াজের সংকট হবে না জানিয়ে তিনি বলেন, মার্চে রমজান হবে। ওই সময় দেশীয় পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তাই বাজারে পেঁয়াজের সংকট হবে না। স্বাভাবিকভাবে তখন সরবরাহ বেশি থাকবে তাই দামও স্বাভাবিক থাকে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আরাফাত হোসাইন বলেন, সবসময় সংকটের কারণে দাম বাড়ে তা ঠিক না। বেশিরভাগ সময়ে দেখা যায় সিন্ডিকেটের কারণে হঠাৎ করে দাম বেড়ে যায়। এখন আমদানি পর্যাপ্ত থাকলে শেষ পর্যন্ত দাম নিয়ন্ত্রণে থাকে কি না সেটি সংশয় থেকেই যায়।
বিএসডি / এলএম