নিজস্ব প্রতিবেদক:
রেলের উর্ধ্বতনদের সঙ্গে বৈঠকের পর কর্মসূচী স্থগিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মহিউদ্দিন রনি। এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টা থেকে রাত সাড়ে ৯টা সঙ্গে টানা ৪ ঘণ্টা রেল মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করেন রনি। বৈঠকে রেল সচিব ও রেল অধিদফতরের মহাপরিচালক উপস্থিত ছিলেন। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তিনি। এর আগে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ের গিয়ে স্মারকলিপি দেন রনি।
বৈঠক শেষে রেল সচিব হুমায়ুন কবির জানান, রনিকে রেলের অংশীজন সভার প্রতিনিধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে। রনির সঙ্গে তার ৬ দফার প্রতিটি দফা নিয়ে আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমরা এ বিষয়ে আন্তরিক। পরে মহিউদ্দিন রনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘সচিব মহোদয় ও ডিজি মহোদয়ের সম্মতিক্রমে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অংশীজন সভায় আমাকে একজন প্রতিনিধিসহ উপস্থিত হয়ে যাবতীয় অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা উত্থাপন ও আমার ৬ দফার বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ার ফলোআপে থাকার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। আমার ৬ দফা দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আস্থা রেখে এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ডিজি মহোদয়ের প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ও আমার আন্দোলনের সুযোগ নিয়ে তৃতীয় কোন পক্ষ যাতে কোন অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, তাই আপাতত আমি আমার আন্দোলন স্থগিত ঘোষণা করছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর ৬ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি দিয়েছেন রেলের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। গতকাল সোমবার বিকালে তিনি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে স্মারকলিপি দেন। আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান এটি গ্রহণ করেন। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘মহিউদ্দিন রনি রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে একটি স্মারকলিপি আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর দিয়েছেন। আমরা তাকে আশ্বস্ত করতে চাই, আমরা এটি আমাদের নেত্রী বরাবর পৌঁছে দেব।’
স্মারকলিপি দেওয়ার পর রনি সাংবাদিকদের বলেন, আমার আন্দোলনের অংশ হিসেবেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিলাম। রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে আমার এবং সারা দেশের মানুষের পক্ষে ৬ দফা দাবি যেন অবিলম্বে বাস্তবায়ন করা হয়। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিতে পড়লে এসব দাবির বাস্তবায়ন হবে।
গত ৭ জুলাই রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও যাত্রী হয়রানির প্রতিবাদে ৬ দফা দাবি নিয়ে হাতে শিকল বাঁধা অবস্থায় কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান নেন মহিউদ্দিন রনি। ১৩ দিন তিনি সেখানে অবস্থান করেন। শুরুতে একা আন্দোলনে নামলেও পরে তার বন্ধু, সহপাঠীসহ আরো বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থীও তাতে অংশ নেন। সেখানে অবস্থান নিয়ে গান, কবিতা, পথনাটক ও দুর্নীতিবিরোধী বিভিন্ন প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান তারা। রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এদিকে সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগও করেন রনি।
রেলওয়েতে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে আন্দোলনকারী মহিউদ্দিন রনির দাবিগুলো হচ্ছে—টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কমের যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করা এবং হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকিট কালোবাজারী প্রতিরোধ করা; অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে, সেই সঙ্গে অনলাইন-অফলাইনে টিকিট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করা; যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা; ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করা এবং ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ এবং স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।