লাইফস্টাইল ডেস্ক,
শশীলজ—প্রায় দুই শত বছর পুরনো এই বাড়ি ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামেও পরিচিত। মুক্তাগাছার জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরীর পালক পুত্র শশীকান্ত আচার্য চৌধুরীর নামে উনিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণকৃত দ্বিতল ভবনটির কিছু বিষয় আজও রহস্যময়।
শশীলজের মূল ফটক থেকে ভেতরে ঢোকার সময় সম্মুখ চত্ত্বরে মার্বেল পাথরের তৈরি গ্রীক দেবী ভেনাস যেন দু-হাতে স্বাগত জানানোর জন্য দাঁড়িয়ে আছে। ভেনাসের স্বল্পবসনা স্নানরত মর্মর মূর্তিই যেন জমিদারের রুচি বহন করে আসছে যুগ যুগান্তর ধরে। বর্তমানে এই মূর্তিটির কাছাকাছি যেতে দেওয়া হয় না। দেখতে হলে দূর থেকেই দেখতে হবে গ্রিক দেবীকে।
পাশেই রয়েছে পদ্মবাগান। শশীলজের ভেতরে বারান্দা অতিক্রম করে কয়েক ধাপ সিঁড়ি পেরোলেই রঙ্গালয়। সেই রঙ্গালয়ের এক পাশে বিশ্রাম ঘর। বিশ্রাম ঘরের পর কাঠের মেঝেযুক্ত হলঘর। হলঘরের পাশেই বর্ণিল মার্বেল পাথরে নির্মিত আরেকটি ফোয়ারা। অবশ্য এখন আর এসব দেখার কোনো উপায় নেই। বাইরে থেকে শশীলজের সৌন্দর্য দেখেই তৃপ্ত হতে হবে।
১৮টি বিশাল বিশাল ঘর নিয়ে শশীলজ। বারান্দা ও করিডোর নিয়ে ভবনটি ৫০ হাজার বর্গ ফুটের কম হবে না। পুরো ভবনের ফ্লোর মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মিত। ছাদে উঠার জন্য একটি কারুকাজ খচিত লোহার প্যাঁচানো সিঁড়ি আছে। পুরো ভবনে রানিং ওয়াটারের লাইন টানা আছে।
শশীলজের বিশাল ফটকসহ মার্বেল পাথর দিয়ে ঘাটলা বাঁধা পুকুর রয়েছে। কল্পকাহিনী রয়েছে, পুকুরে নাকি বড় বড় মাছ রয়েছে, যা ঠিক সন্ধ্যার সময় টিপটিপ বৃষ্টি ঝরলে তখন ভেসে উঠে। স্নানঘরের পাশেই রয়েছে একটি সুড়ঙ্গ পথ। ধারণা করা হয়, ওই সুড়ঙ্গ পথে মুক্তাগাছার বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা ছিল। এখানে বেশকিছু দুর্লভ ও দুষ্প্রাপ্য প্রাচীন গাছগাছালি রয়েছে। ওর মধ্যে অন্যতম নাগলিঙ্গম বা নেগুরাবৃক্ষ। নাগলিঙ্গম গাছে বছরজুড়েই ফুল ফোটে।
নির্মাণ, বিধ্বস্ত ও বর্তমান
নয় একর জমির ওপরে লালচে-হলুদ রাঙা ইট দিয়ে গাঁথা ১৬টি গম্বুজবিশিষ্ট দ্বীতল এই জমিদার বাড়ি নির্মিত। বাড়ির সামনে উঠানজুড়ে রয়েছে বাগান। শশীলজ নামক এ জমিদার বাড়িটির মূল প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহারাজা সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। তার একচল্লিশ বছর শাসনামলে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে ময়মনসিংহ শহর পেয়েছিল নান্দনিক সৌন্দর্য।
১৮৯৭ সালের ১২ জুন গ্রেট ইন্ডিয়ান ভূমিকম্পে বাড়িটি বিধ্বস্ত হলে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন জমিদার সূর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী। ১৯০৫ সালে ঠিক একই স্থানে নতুনভাবে শশীলজ নির্মাণ করেন পরবর্তী জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী। নবীন জমিদারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শশীলজ হয়ে উঠে অনিন্দ্য সুন্দর আরও বেশি দৃষ্টিনন্দন।
১৯৫২ সাল থেকে বাড়িটি মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হয়ে এসেছে। বর্তমানে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সঙ্গে সীমানা প্রাচীর নির্ধারণ করে শশীলজ ২০১৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের আওতাধীন করে সংস্কারের কাজ চলছে।
যাওয়ার উপায়
রাজধানীর গুলিস্তান ও মহাখালী থেকে প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহনে বাস ছেড়ে যায় ময়মনসিংহ। ভাড়া ২৩০ টাকা। বাসে গিয়ে শহরের চরপাড়া থেকে অটো বা রিকশায় শহরের জিরো পয়েন্টের পাশেই শশীলজের অবস্থান।স্থানীয়রা অনেকে জমিদার বাড়ি বা মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে চিনে থাকে।
ময়মনসিংহ প্রত্নতত্ত্ব জাদুঘর সপ্তাহের রোববার বন্ধ ও সোমবার অর্ধবেলা এবং প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১৫ টাকা। চাইলে আপনি শহরে রাত্রিযাপন করতে পারেন। শহরে মান সম্মত অনেক হোটেল রয়েছে।
বিএসডি/আইপি