নিজস্ব প্রতিবেদক:
আল্লামা মাহমূদুল হাসানআল্লাহর উপস্থাপনা কত সুন্দর, কত সহজতর! মানুষ গোল আলু দিয়ে তরকারি রান্না করে খায়। যদি এ আলুগুলোকে গোলায় রেখে দেওয়া হয় তাহলে আস্তে আস্তে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। আর খেয়ে ফেলা হলে নাপাক হয়ে বের হয়ে যায়। কিন্তু যদি এ আলুকে মাটিতে পুঁতে কবরের মতো উঁচু করে পানি দেওয়া হয় তাহলে একপর্যায়ে একটি আলু বড় বড় অসংখ্য আলুর উৎপাদনের মাধ্যম হয়।
আলুর ওপরের মাটি কবরের মতো উঁচু নয় কি? কবরকেও এর চেয়ে অধিক উঁচু অথবা পাকা করার অনুমতি নেই। কবর পাকাপোক্ত করা এবং কবরের গায়ে কোরআন ও হাদিস অঙ্কন অথবা লিখে কবরে ধারণ করা, গিলাফ লাগানো, কবরে আলোকসজ্জা করা, আগরবাতি-মোমবাতি জ্বালানো ও পুষ্প অর্পণ ইত্যাদি নেহাত গর্হিত কাজ। ইহুদি-খ্রিস্টান ও বিজাতিরা এরূপ করে।
যদি এরূপ করা কোনো সওয়াবের কাজ হতো তাহলে হাদিসে এর প্রতি নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হতো না। সাহাবা, তাবেয়িন, আইম্মায়ে মুজতাহিদিন ও বুজুর্গানেদিন তাঁদের কবর পাকাপোক্ত করতে অসিয়ত করতেন এবং সবার কবরই পাকাপোক্ত করা হতো। যদি কোথাও তাঁদের কবর পাকাপোক্ত দেখা যায়, তাহলে বুঝতে হবে এর পেছনে কোনো বিশেষ কারণ ও বাধ্যবাধকতা রয়েছে, অথবা মূর্খ ও শরিয়ত সম্পর্কে অনভিজ্ঞ লোকেরা হয়তো এরূপ করেছে। অন্যথায় এরূপ করার অনুমতি নেই। হ্যাঁ, আলু পুঁতে এর ওপরের মাটিকে যেমন একটু উঁচু করা হয়, তেমনি কবরকেও সামান্য একটু উঁচু করা যায়।
আলু মাটিতে পুঁতে রাখলে যেমন এক /দুই দিন পর পচে গলে যায়, কবরস্থ দেহও অনুরূপ পচে গলে যায়। এজন্যই বিনা জানাজায় কবরস্থ লোকের জানাজা নামাজ তিন দিন পর্যন্ত আদায় করা যায় বলে ফকিহরা মত পোষণ করেছেন। এর চেয়ে বেশি দিন পর্যন্ত জায়েজ নেই। আলু মাটির নিচে পচে গলে যায় বটে; কিন্তু মাটির সঙ্গে মিশে তা অবশিষ্ট থেকে যায়। আর পরবর্তীতে আবার আলুর বংশ জন্মায়, শেষ হয় না।
তেমনিভাবে মৃত ব্যক্তির দেহ মাটির নিচে মাটির সঙ্গে মিশে অমর হয়ে থাকে। যখন পুনরুত্থানের সময় হবে, তখন চুম্বকের আকর্ষণে যেমন লৌহকণিকা একত্রিত হয়, তেমনি মানুষের চূর্ণ-বিচূর্ণ দেহের কণাগুলো আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে একত্রিত হয়ে হজরত আদমের সুরতে ৬০ হাত লম্বা বৃহৎ আকৃতি ধারণ করে ময়দানে হাশরে সমবেত হবে। এতে অবাস্তবতার কোনো কিছুই নেই। কিন্তু যারা এ ধ্রুব সত্যটি উপলব্ধি করতে অক্ষম তারা মৃত্যুর পর পুনর্জীবনকে অসম্ভব ও অবাস্তব মনে করে।
এক লোক মূর্খ ছিল বিধায় আল্লাহর পুনর্জীবিতকরণের ক্ষমতা অনুধাবনে ব্যর্থ হয়ে স্বীয় সন্তানদের প্রতি আগুনে জ্বালিয়ে ছাই উড়িয়ে দেওয়ার অসিয়ত করেছিল। ফলে তার সন্তানরাও তার লাশ জ্বালিয়ে অসিয়ত পালন করে। আল্লাহর কুদরতে সেই ছাইকণা একত্রিত হয়ে মানুষের আকার ধারণপূর্বক ভীতসন্ত্রস্ত অবস্থায় ওই ব্যক্তি তার মহান দরবারে হাজির হলে আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি এরূপ অসিয়ত করলে কেন?
লোকটি উত্তর করল, ‘হে রব্বুল আলামিন! আপনি সবকিছুই জানেন, আপনি তো মানুষের অন্তর সম্পর্কেও অবগত আছেন। আমি অপরাধী, সারা জীবন কেবল আপনার নাফরমানিতেই কাটিয়েছি; কী করে আপনাকে মুখ দেখাব, আপনার দেওয়া কঠোর আজাবই বা কী করে সহ্য করব, তাই এরূপ অসিয়ত করে বাঁচার চেষ্টা করেছি! যা করেছি, আপনার ভয়ভীতির কারণে করেছি; অন্য কোনো কারণে নয়।’
অন্তরে আল্লাহর ভয় এবং নেক আমলই হচ্ছে মুক্তির একমাত্র উপায়। হাশরের ময়দানে একমাত্র এটাই কাজে লাগবে। আল্লাহকে তোমরা ভয় কর এবং আল্লাহর দরবারে পেশ করার মতো কীরূপ আমল করেছ একটু যোগ-বিয়োগ করে দেখ। কড়া-ক্রান্তির হিসাব-নিকাশ হবে, জুলুম করা হবে না, ইনসাফ করা হবে, নেক আমলের বিনিময় দেওয়া হবে। শান্তির জীবন জান্নাত আর পাপাচারিতার পরিণাম হবে জাহান্নাম।
বিএসডি /আইপি