ক্রীড়া ডেস্ক:
শুক্রবার ছুটির দিন। তার ওপর বাংলাদেশের খেলা। ঘরে বসে থাকেননি ক্রিকেটপ্রেমী প্রবাসীরাও। পুরো সপ্তাহ কাজ শেষে এদিন গন্তব্য ছিল একটাই, শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়াম। শুধু যে খেলা দেখতে এসেছেন তা নয়, টিকিটও মিলছিল না, আবার কালোবাজারি থেকে কারও কাছ থেকে যে কিনবেন, সেই সামর্থ্যও সবার নেই। তবুও দলে দলে সবাই চলে এসেছেন স্টেডিয়ামে।
টিকিট হাতে থাকা ভাগ্যবানরা ঢুকতে পারলেন মাঠে। বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে শুক্রবার গ্যালারিতে দাপট থাকল বাংলাদেশিদেরই। মাঠের খোলা প্রেসবক্সে বসে মনে হচ্ছিল যেন বাংলাদেশের কোন মাঠে খেলা হচ্ছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সমর্থকের দেখা মিলছে হাতে গোনা। গ্যালারির পুরোটাতেই লাল-সবুজের গর্জন! মরুর বুকে মনে হচ্ছে এ যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ!
মাঠে ঢোকার পথে কথা হচ্ছিল আজমান থেকে আসা এক প্রবাসী বাংলাদেশি দর্শকের সঙ্গে। যার গ্রামের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। আবু ইউসুফ নামের সেই দর্শক বলছিলেন, ‘বাংলাদেশের খেলা কখনোই মিস করি না। টেলিভিশনের পর্দায় খেলা তো অনেক দেখিছি। এখন সাকিব-মুশফিক ভাইরা আমাদের শহরে, খেলা না দেখে পারি?’ জানালেন ৭৫ দিরহাম দিয়ে টিকিট কেটেছেন তিনি। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় দুই হাজার টাকার কাছাকাছি।
তার মতো এতটা ভাগ্যবান নন দুবাই থেকে আসা জুবায়ের হোসেন। মাঠের বাইরে তাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্ন করেছিলাম, খেলা দেখতে যাবেন না? মন মরা হয়ে বলছিলেন, ‘না, যেতে পারলাম না। টিকিট খুঁজে ছিলাম। কিন্তু বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের আজকের ম্যাচের টিকিট চাইছে ১৫০ দিরহাম। এতো টাকা দিয়ে কেনা সম্ভব না।’ আসলেই চার হাজার টাকা খরচ করে খেলা দেখা তো বিলাসিতাই। রক্ত-ঘামে অনেক পরিশ্রমে তবেই মরুর দেশে মিলে দিরহাম!
জুবায়েরে ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন আরেক যুবক। নাম জানতেই বললেন, শামীম হোসেন। বাড়ি কুমিল্লায়। তার হাতেও টিকিট নেই। তবে অন্য বাংলাদেশিদের আনন্দ দেখতেই ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এসেছেন তিনি। প্রচণ্ড রোদের দাঁড়িয়ে থাকা এই প্রবাসী ক্রিকেট ভক্ত বলছিলেন, ‘ঘরে মন টিকছিল না। তাই চলে এসেছি। এখানে আপনাদের দেখে মনটা ভালো হচ্ছে। বাংলাদেশের পতাকা, দেশের মানুষ। আমার তো মনে হচ্ছে আমি কুমিল্লাতেই আছি।’
টিকিট কেটে খেলা দেখবেন বলে মাঠে এসেছিলেন সিলেটের তরুণ বদিউল আলম। শারজাহতেই একটি দোকানে কাজ করেন। তার ছুটি ছিল না, তবে দোকানের মালিককে বলে কয়ে খেলা দেখতে এসেছেন। বাংলাদেশি ক্রিকেট যখন মাঠ ও মাঠের বাইরে দুঃসময়ে তখন পরিণত সমর্থকের মতো তিনি বলছিলেন, ‘দেখুন, জয় পরাজয় নিয়ে এতো ভাবনা নেই। হারলেও দেশটা আমরা। আর জিতলেও আমার। আমি জানি একদিন ওরা ভালো করবে। খারাপ সময়েই তো তাদের পাশে থাকতে হবে বেশি করে!’
এই কথার পর আর কিছুই বলার থাকে না। এখানেই অনেকে শর্তহীনভাবে পাশে আছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের। বাংলাদেশ হারলে তাদের মন কেঁদে উঠে, দূর প্রবাসে একটা জয়ও আবার তাদের চোখে জল নিয়ে আসে। সেটা আনন্দশ্রু! বদিউলরাই বাঁচিয়ে রাখেন ক্রিকেট!
বিএসডি /আইপি