নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশের দিনটি শেষ বিকেলে এসে বিবর্ণ হতে দিলেন না এবাদত। দিনের শেষ বলে ফেরান টম ব্লানডেলকে। এতে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সমান ভাগ বসিয়ে প্রথম দিন পার করল বাংলাদেশ দল। এবাদত অবশ্য দিনের বাকি সময় ছিলেন একেবারে মলিন। নির্বিষ বোলিংয়ে আগের ১৫ ওভারে খরচ করেছেন ৪৯ রান। প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। এজন্য প্রশ্ন ওঠে, সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করলেও মূল ম্যাচে কেন সুযোগ হয়নি পেসার আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির?
বিস্ময় ছিল মেহেদী হাসান মিরাজের খেলানোর সিদ্ধান্তটি। পরীক্ষিত তাইজুল ইসলামকে বসিয়ে খেলানো হয় মিরাজকে। দেশের বাইরে এই অফ স্পিনার পরিসংখ্যান একেবারেই তার পক্ষে নয়। তবুও কিউইদের প্রথম ৫ ব্যাটসম্যান বাঁহাতি হওয়ায় দৌড় থেকে ছিটকে যান বাঁহাতি তাইজুল। মিরাজ ২৭ ওভার বল করে দিয়েছেন ৭২ রান।
তাইজুলের অভাব টের পাওয়া গেল টেস্টের গোটা দিনেই। তার অভাব পূরণে বল হাতে তুললেন খোদ অধিনায়ক মুমিনুল। পার্টটাইমার মুমিনুলের হাত ধরে আসে স্বস্তি। বল হাতে প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর উইকেটের দেখা পান এই বাঁহাতি। ফেরান দিনের সফল ব্যাটসম্যান কনওয়েকে।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশেরই ছিল। টস ভাগ্য কথা বলে লাল-সবুজের হয়ে। নতুন বছরের শুরুতে ব্যাট হাতে নিতে চাইলেন না অধিনায়ক মুমিনুল হক, আমন্ত্রণ জানালেন প্রতিপক্ষকে। তাতে সাফল্য আসল ইনিংসের চতুর্থ ওভারেই। নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে টম লাথামকে ফেরালেন বাঁহাতি তরুণ পেসার শরিফুল ইসলাম।
ফুল লেংথের বল খেলতে গিয়ে ইন সাইড এজ হয়ে উইকেটের পিছনে লিটন দাসের হাতে ক্যাচ তুলে দেন লাথাম। বাঁদিকে খানিকটা ঝাঁপিয়ে পড়ে দৃষ্টিনন্দন একটি ক্যাচ নেন লিটন। তাতে কেন উইলিয়ামসনের পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসেবে খেলতে নামা লাথাম আউট হন ব্যক্তিগত ১ রান করে।
তাসকিন গতি দিয়ে কোণঠাসা করার চেষ্টা করেন। উইকেটের দুই পাশেই সুইং করিয়ে প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নেন শরিফুল। এতে খেই হারায় স্বাগতিকরা। টানা ৬ ওভার মেডেমের পর ইনিংসের ৪৬ নম্বর বলে দ্বিতীয় রানের দেখা পায় নিউজিল্যান্ড। এরপরের গল্পটা অবশ্য কনওয়ের। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেন উইল ইয়াং।
বাংলাদেশি বোলারদের শাসন করে দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে দুজন যোগ করেন ১৩৮ রান। মাঝে ফিফটির স্বাদ পান দুজনেই। নাজমুল হোসেন শান্তর থ্রোতে লিটন দাস উইকেট ভাঙলে ৫২ রান করে আউট হন ইয়াং। পরে কনওয়ে আর রস টেলর বড় জুটির ইঙ্গিত দেন। সে জুটি বেশি বাড়তে দেননি শরিফুল। বাঁহাতি পেসারের বল কাভার ড্রাইভ করতে গিয়ে সাদমানের হাতে ক্যাচ দেন টেলর। ফেরেন ৩১ রান করে।
তার আগেই অবশ্য সেঞ্চুরির দেখা পান কনওয়ে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ইনজুরিতে পড়ায় ফাইনাল খেলতে পারেননি। ইনজুরির কাটিয়ে আজই প্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরলেন। নিজের ফেরা সেঞ্চুরিতে রাঙালেন তিনি। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। এর আগে লর্ডসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। সেটিকে ডাবলে রূপ দিয়েছিলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। আজ থামলেন ১২২ রানে।
ক্রমশ হুমকি হয়ে ওঠা কনওয়েকে ফেরান মুমিনুল হক। নতুন বল নেওয়ার আগে নিজেই আসেন বোলিংয়ে। নিজের প্রথম ওভারে ভালো বোলিং করে দেন ১ রান। দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই উইকেট। সেঞ্চুরিয়ান কনওয়ে তার লেগ স্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন। ১২২ রানে থামেন কনওয়ে। ২২৭ বলে ১৬ চার ও ১ ছক্কায় সাজিয়েছেন ইনিংসটি।
বাংলাদেশের দিনটি শেষ বিকেলে এসে বিবর্ণ হতে দিলেন না এবাদত। দিনের শেষ বলে ফেরান ব্লানডেলকে। ১১ রানে বোল্ড হন কিউই উইকেটরক্ষক। এতে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোর বোর্ডে ২৫৮ রান তুলে প্রথম দিনের খেলা শেষ করে ব্ল্যাকক্যাপসরা। হেনরি নিকোলস ৩২ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরু করবেন।
এসএ