মাসুদ হোসেন:
২০১৮ সালের রেট সিডিউলে চলছে ২০২১ সালের সরকারি নির্মাণ কাজ। সময়ের সাথে ধাপে ধাপে কয়েক দফা নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও বাড়েনি কাজের রেট সিডিউল। এছাড়া লেছ এন্ড এভাব থিওরির অসম প্রতিযোগীতার ফলে বিভিন্ন প্রকল্পের নির্মান কাজে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে এবং তা বাস্তবায়ণ অসম্ভব হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাষ্ট্রি’র নেতৃবৃন্দ। এ সময় বাংলাদেশ গনপূর্ত ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বাবলা বিএসিআই’র দাবীর সাথে একাত্বতা ঘোষনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ জানান, সরকারের গৃহীত বিভিন্ন ভৌত অবকাঠামোসহ উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে সহায়ক হিসাবে BACI ‘ র সদস্যগণ বিভিন্ন প্রকল্প সাফল্যের সাথে বাস্তবায়ন করে আসছেন।কিন্তু দুঃখের বিষয় নির্মাণ প্রকল্প সমূহের মূল উপকরণ Construction Materials যেমন MS Rod, Stone Chips, Cement, Brick, Centering Shuttering Materials, Grill , ইত্যাদি দ্রব্যাদিসহ এ খাতের প্রায় সকল প্রকার দ্রব্যাদির মূল্য অস্বাভাবিকভাবে অনবরত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতি টন রডের বর্তমান মূল্য ৭৮-৮০ হাজার টাকায় পৌছেছে। অর্থাৎ টাকার অংকে বৃদ্ধির হার প্রায় ৪৫ %। ইলেকট্রিক ক্যাবল সহ অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যও শ্রেণিভেদে ২৫-৩০ % বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া এ শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিক, সুপারভাইজার ও দক্ষ জনবলের মুজুরীও শতকরা প্রায় ৬০-৭০ % বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে প্রতি লিটার জ্বালানি তেলের মূল্য ৬৫ টাকার স্থলে বৃদ্ধি পেয়ে ৮০ টাকা হয়েছে। ফলে নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের ব্যয়ও সে অনুপাতে বৃদ্ধি পাবে।
সূত্র থেকে জানা যায় যে কোন অবকাঠামো নির্মাণ কাজে প্রধান উপাদান এম এস রড। সম্পূর্ন কাজের মধ্যে রড জাতীয় কাজের পরিমাণ হয় ২০-২৫ %। তাই এম এস রডের মূল্য বৃদ্ধি পেলে পুরো স্থাপনার নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে হঠাৎ করে এম এস রডের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় চলমান কাজ চালিয়ে নেয়া অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এম এস রড সহ সকল সামগ্রীর মূল্য হিসাব করে টেন্ডারে দর উল্লেখ করে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে কার্য্যাদেশ পেয়ে থাকি।সাধারনত GOB ফান্ডের সমস্ত কাজ Fixed Rate এ কার্য্যাদেশ প্রদান করা হয়। তাই নির্মাণ সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও আমরা সরকার থেকে কোন প্রকার মূল্য সমন্বয় পাই না। যদিও বিদেশী ফান্ডের প্রকল্পে Price Adjustment বা Rate Escalation থাকে। অন্যদিকে সকল সরকারী দরপত্রে যে Rate Schedule অনুসরণ করা হয় তা ২০১৮ সালে প্রণীত।উক্ত সময়ের পরে নির্মাণ সামগ্রীর বাজার দর কয়েকবার বৃদ্ধি পেলেও তা হালনাগাদ করা হয়নি।
প্রকৌশলী এস এম খোরশেদ আলম বলেন, নির্মাণ প্রকল্পের পানি ও বিদ্যুৎ বিল PWD Rate এর সাথে সন্নিবেশিত না থাকায় ঠিকাদারদেরকে তা পরিশোধ করতে হয়। গত অর্থ বছরে দরপত্র দাখিলের সময় ৫% হারে AIT ধার্য্য ছিল এখন তা ৭% করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রকল্পের অগ্রগতিতে অতি মন্থরতা দেখা দিয়েছে। কাজের স্বাভাবিক অগ্রগতি অর্জিত না হওয়ার ফলে বিল পাওয়া যাচ্ছে না এবং গৃহীত ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় ব্যাংক হতে আর্থিক সহায়তা প্রাপ্যতা অনিশ্চিত হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ঠিকাদার গণের আর্থিক সক্ষমতা ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর উর্দ্ধগতিতে ঠিকাদারগণ ইতোমধ্যে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা চলমান প্রকল্পের কাজ চালিয়ে যেতে পারছি না এবং নতুন কোন দরপত্রে অংশ গ্রহণ করার সাহসও পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় চলমান অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ সম্ভব না হলে প্রকল্পের সকল নির্মাণ কাজে স্থবিরতা দেখা দিবে এবং প্রকল্প বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দরা কিছু দাবি উত্থাপিত করেন প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল মহলের কাছে,
১. বর্তমান চলমান কাজ গুলো যেহেতু Fixed Rate Contract এ সম্পাদিত হয় ; তাই বিশেষ ব্যবস্থায় PPR সন্নিবেশিত ফরমূলা অনুযায়ী প্রজ্ঞাপন জারী করে Price Adjustment চালু করা হউক
২. বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী সকল সরকারী দরপত্রের Rate Schedule হালনাগাদ করা হউক। ৩.প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত পানি ও বিদ্যুৎ সংক্রান্ত খরচ PWD Rate Schedule এ সন্নিবেশিত করা হউক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাষ্ট্রি’র সভাপতি প্রকৌশলী সফিকুল হক তালুকদার, সহ-সভাপতি প্রকৌশলী বিমল চন্দ্র রায়, সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী এস,এম খোরশেদ আলম, গনপূর্ত ঠিকাদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক বাবুল আক্তার বাবলা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।