নিজস্ব প্রতিবেদক
পাঁচ আগস্টের পর সংখ্যালঘু নির্যাতন নিয়ে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ মিথ্যা তথ্য চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি শফিকুল আলম।
সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেছেন, হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদ ৫ আগস্টের পর সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ২৩ হত্যাকাণ্ডের দাবি করা হলেও পুলিশের তদন্তে একজনকেও হত্যার প্রমাণ পায়নি। এছাড়াও তারা ১৭৪টি ঘটনার যে তথ্য দিয়েছে সেটিও সঠিক নয়। পুলিশ তদন্ত করে এসব ঘটনার তথ্য পায়নি।
উপপ্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, ২৩টি ঘটনার মধ্যে তদন্ত করে ২২টি ঘটনার তথ্য পেয়েছে পুলিশ। একটি ঘটনার তথ্য পায়নি। এগুলো বেশিরভাগ ছিল ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক ও পারিবারিক ঘটনা। এমনকি আগের ঘটনাকে এবারের ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কোনো ঘটনার সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্ক নেই।
তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার কোনো ধরনের সহিংসতাকে সমর্থন করে না। একইসঙ্গে এই ধরনের ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বলে প্রচার উদ্বেগজনক বলে মনে করে। এ ধরনের বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশের সার্বিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের সূত্রপাত ঘটাতে পারে বিবেচনায় সব পক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানায় অন্তর্বর্তী সরকার।
গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে গণঅভ্যুত্থানের পর গত সাড়ে চার মাসে দেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় ২৩ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। তাদের দাবি সঠিক নয় দাবি করে ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি বলেন, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় নিহত দাবি করা ২৩টি ঘটনার বাস্তব কারণ জানতে অধিকরত তদন্তের জন্য পুলিশকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নেয় এবং উল্লিখিত ২৩টি হত্যাকাণ্ডের তালিকা সংগ্রহ করে। ওই তালিকে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পুলিশের কাছে পাঠিয়ে প্রতিটি ঘটনার প্রকৃত কারণ ও গৃহীত আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
পুলিশ সদর দপ্তর থেকে প্রতিটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানায়। উল্লেখিত ২৩টি ঘটনার ২২টির প্রাথমিক কারণ সম্পর্কে পুলিশ অবগত হয়েছে এবং যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে একটি ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য পাওয়া পায়নি পুলিশ। যে ২২টি ঘটনার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া গেছে তারমধ্যে একটি ঘটনার সঙ্গেও সাম্প্রদায়িক সহিংসতার কোন সম্পর্ক নেই। হত্যাকাণ্ডের মধ্যে সর্বোচ্চ সাতটির সঙ্গে চুরি ও দস্যুতার সম্পর্ক রয়েছে, চারটিতে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কলহের ঘটনা জড়িত, তিনটি ক্ষেত্রে জেনারেল ক্রাইম যেমন ধর্ষণ, অতিরিক্ত মদ পানে মৃত্যু এবং বিদ্রুপ মন্তব্য করা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারি থেকে মৃত্যু, দুইটি দুর্ঘটনা জনিত মৃত্যু, দুইটি ব্যবসায়িক শত্রুতার জেরে মৃত্যু, একটিতে স্থানীয়দের সংঘাতে মৃত্যু, একটি জমিজমার বিরোধ সংক্রান্ত ঘটনায় মৃত্যু, একটি আত্মহত্যার ঘটনা এবং একটি মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনো না জানা গেলেও এটা নিশ্চিত হওয়া গেছে যে সেখানে কোনো সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বিষয় নেই।
এই তালিকায় এমন ব্যক্তিও রয়েছেন যিনি গত বছরের জানুয়ারি মাসে একটি ঘটনায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ডিসেম্বর মাসে হাসপাতালে মারা যান। এই প্রত্যেকটি ঘটনাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে আইনি পদক্ষেপ ইতোমধ্যে গ্রহণ করা হয়েছে। ২৩টি ঘটনার দুটোতে যেখানে আত্মহত্যা ও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রয়েছে সেই দুটি পুলিশ ইতোমধ্যে তদন্ত শেষে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছে। অপর ২১টি তদন্তাধীন মামলায় ইতোমধ্যে ৪৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারদের মধ্যে ১৭জন নিজেদের দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
ঐক্য পরিষদের এ ধরনের মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র কি-না জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যারা মারা গেছেন তাদের বিচার নিশ্চিত করা আমাদের প্রধান দায়িত্ব। সাম্প্রদায়িক সহিংসতা পুলিশ যেভাবে তদন্ত করে এসব ঘটনার ব্যাপরে তদন্ত করবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তদন্ত করে দেখা হোক সাম্প্রতিক সহিংসতা আচে কি না। ঐক্য পরিষদকে আহ্বান করেছি তারাও সঠিক তদন্ত করুক।
তারা বলেছে, বেশিরভাগ তথ্য গণমাধ্যম থেকে নেওয়া। আমরা খতিয়ে দেখিয়েছি গণমাধ্যমে আসার ঘটনাগুলো সাম্প্রদায়িক ঘটনা না। তারপরও হিন্দু বৌদ্ধ ঐক্য পরিষদকে আহ্বান জানাবো, তারা যেন প্রকৃত ঘটনা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে।