নিজস্ব প্রতিবেদক:
প্রতারণা জালিয়াতি, অবৈধ সম্পদ অর্জন ও মানিলন্ডারিংয়ের অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ওরফে এসকে সিনহার নামে আরেকটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বৃহস্পতিবার মামলাটি করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্ষমতার অপব্যবহার মাধ্যমে রাজউকের প্লট জালিয়াতি ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
‘সাবেক প্রধান বিচারপতি জনাব সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার নিজ নামে রাজউক হতে উত্তরা আবাসিক এলাকায় একটি প্লট বরাদ্ধ পান। পরবর্তীতে নিজ ক্ষমতা অপব্যবহার করে অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ও প্রতারণার মাধ্যমে তার ভাই নরেন্দ্র কুমার সিনহার নামে রাজউক পূর্বাচল প্রকল্পে তিন কাঠার আরও প্লটের জন্য আবেদন করেন।’
দুদক সচিব আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, সাবেক এই প্রধান বিচারপতি নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভাইয়ের নামে আবেদন করা ওই তিন কাঠার প্লট বরাদ্দ নেন। পরে তিন কাঠার প্লটটিকে আবারও প্রভাব খাটিয়ে পাঁচ কাঠার প্লটে রূপান্তর করেন।
এসকে সিনহা রাজউকের যে কর্মকর্তাদের ব্যবহার করে প্লট জালিয়াতি করেছেন তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে দুদক সচিব বলেন, ‘তদন্ত করে তাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যববস্থা নেয়া হবে।’
দুদকের অনুসন্ধানে যায়, এসকে সিনহা ভাইয়ের নামে অবৈধভাবে বরাদ্দ নেয়া পূর্বাচলের প্লটটিও পুনরায় নিজ ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে পূর্বাচল থেকে প্লট স্থানান্তর করে উত্তরার সেক্টর-৪ এ রাজউক থেকে অনুমোদন করান। আর প্লটের যাবতীয় অর্থ মোট ৭৫ লাখ টাকা নিজেই পরিশোধ করেন। পরে ওই প্লটে ৯তলা ভবন নির্মাণ করেন।
দুদকের অনুসন্ধানকালে নিরপেক্ষ প্রকৌশলীর প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তরা আবাসিক এলাকায় ভবনের নির্মাণ ব্যয় ৬ কোটি ৩১ লাখ ৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। এ ছাড়া, প্লটের মূল্য হিসেবে রাজউকে পরিশোধ করা হয় ৭৫ লাখ টাকা। মোট ৭ কোটি ১৪ লাখ পাঁচ হাজার ৮৬৫ টাকা সম্পদ অর্জন করেন সম্পদ এসকে সিনহা।
মামলার এজাহারে বলা হয়, এসকে সিনহা অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণার মাধ্যমে নিজ ভাই ও নিজের আত্মীয়ের নামে বেনামে সম্পদ অর্জন করেছেন। এর কোনো বৈধ উৎস নেই বা জ্ঞাত আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। এই সম্পদ অর্জনের ক্ষেত্রে অবৈধ পন্থায় অর্জিত অর্থ বিভিন্ন ব্যক্তির হিসাবের মাধ্যমে স্থানান্তর, রূপান্তর ও হস্তান্তর করেন।
৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে আরও একটি মামলা রয়েছে দুদকের। এই মামলার রায় ঘোষণার তারিখ রাখা হয়েছে ২১ অক্টোবর।
মামলাটিতে মোট আসামি ১১ জন। তাদের মধ্যে মধ্যে ফারমার্স ব্যাংক লিমিটেডের অডিট কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান মো. মাহবুবুল হক চিশতী (বাবুল চিশতী) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন।
এ ছাড়া, জামিনে রয়েছেন ফারমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি এ কে এম শামীম, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট স্বপন কুমার রায়, ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. লুৎফুল হক, সাবেক এসইভিপি গাজী সালাহউদ্দিন, টাঙ্গাইলের বাসিন্দা মো. শাহজাহান এবং একই এলাকার বাসিন্দা নিরঞ্জন চন্দ্র সাহা।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, ফারমার্স ব্যাংকের ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট সাফিউদ্দিন আসকারী, রণজিৎ চন্দ্র সাহা ও তার স্ত্রী সান্তী রায় পলাতক রয়েছেন।
ওই মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর আসামি শাহজাহান ও নিরঞ্জন চন্দ্র ফারমার্স ব্যাংকের গুলশান শাখায় দুটি অ্যাকাউন্ট খোলে ২ কোটি টাকা করে মোট ৪ কোটি টাকা ঋণের আবেদন করেন। তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং ঋণের আবেদনে উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ৫১ নম্বর বাড়ির ঠিকানা ব্যবহার করা হয়, যার মালিক ছিলেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা।
জামানত হিসেবে আসামি রনজিৎ চন্দ্রের স্ত্রী সান্ত্রী রায়ের নামে সাভারের ৩২ শতাংশ জমির কথা উল্লেখ করা হয় ঋণের আবেদনে। ওই দম্পতি এস কে সিনহার পূর্ব পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করা হয়েছে মামলার এজাহারে।
দুদক জানায়, ব্যাংকটির তৎকালীন এমডি এ কে এম শামীম কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই, ব্যাংকের নিয়ম-নীতি না মেনে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ঋণ দুটি অনুমোদন করেন।
ওই বছরের ৭ নভেম্বর ঋণের আবেদন হওয়ার পর ‘অস্বাভাবিক দ্রুততার’ সঙ্গে তা অনুমোদন করা হয়। পরদিন মোট ৪ কোটি টাকার দুটি পে-অর্ডার ইস্যু করা হয় এস কে সিনহার নামে। ৯ নভেম্বর সোনালী ব্যাংকের সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এস কে সিনহার অ্যাকাউন্টে জমা হয়।
পরে বিভিন্ন সময়ে ক্যাশ, চেক ও পে-অর্ডারের মাধ্যমে ওই টাকা উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে এস কে সিনহার ভাইয়ের নামে শাহজালাল ব্যাংকের উত্তরা শাখার অ্যাকাউন্টে দুটি চেকে দুই কোটি ২৩ লাখ ৫৯ হাজার টাকা স্থানান্তর করা হয় ওই বছরের ২৮ নভেম্বর।
বিএসডি / আইকে