নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, সুস্থ্য ও স্বাভাবিক নয় এমন এক শিশুর ঘোষণায় একটি রাজনৈতিক দল সৃষ্টি হতে পারেনা। একটি রাজনৈতিক দল গঠন করতে আইন ও বিভিন্ন নীতিমালা রয়েছে। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশান এরশাদের সাথে কথা না বলেই তাকে চেয়ারম্যান ঘোষণা, এমন সংবাদ গণমাধ্যমে প্রকাশ ও প্রচার করা কতটা যুক্তিযুক্ত হয়েছে তা বিবেচনা করা উচিত ছিলো। এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহষ্পতিবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরে দুঃস্থদের মাঝে খাদ্যপণ্য বিতরণ উদ্বোধন শেষে এ কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ এর সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান হওয়ার কোন ইচ্ছেই নেই তাঁর। দক্ষতার সাথে জাতীয় পার্টিকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন উদ্যোগের প্রশংসাও করেছেন বেগম রওশন এরশাদ। বিরোধী দলীয় উপনেতা জি এম কাদের বলেছেন, ৬ লাখ কোটি টাকার বিশাল বাজেট আমাদের। বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশে। কিন্ত করোনায় কর্মহীন পরিবারগুলো মারাত্মক অর্থ সংকটে পড়েছে।
তিনি বলেন, এক বছর আগেই আমরা বলেছিলাম লকডাউন দেয়ার আগে মানুষের খাবার, অষুধ এবং জরুরি নিত্যপণ্য নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া কখনোই লকডাউন সফল হবে না। লকডাউন সফল হয়নি, করোনার সংক্রমণ বেড়েছে, বেড়েছে মৃত্যুর হারও। তিনি বলেন, বাজেট তৈরি হয় দেশের জনগনের ট্যাক্সের টাকায়। এ টাকার মালিক দেশের জনগণ। তাই সেখান থেকে প্রতি মাসে দরিদ্র পরিবার প্রতি অন্তত ১০ হাজার টাকা দিলে দেশের মানুষ বাঁচতে পারবে। লকডাউনও সফল হবে। মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের চেয়ে মানুষের জীবন বাঁচানো জরুরি। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা মহানগর উত্তর-এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম সেন্টুর অর্থায়নে এবং ঢাকা মহানগর উত্তর জাতীয় পার্টির ব্যবস্থাপনায় কয়েক হাজার মানুষকে মাস ব্যাপী খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হয়।
জি এম কাদের আরো বলেন, করোনা মোকাবেলায় যখন ২৬ থেকে ২৮ কোটি ডোজ টিকা প্রয়োজন, সেখানে শুধু ঘোষণা আসছে ৫ থেকে ১০ লাখ টিকা আসছে। সারা বিশ^ যখন করোনার টিকা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরছে তখনো আমরা জানিনা কখন দেশের সবাই টিকা পাবেন। দেশের প্রতিটি মানুষকে টিকা দিতে হবে। যেভাবে টিকা দেয়ার কথা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে, তাতে ৫ থেকে ৬ বছর লেগে যেতে পারে। আবার ১০ বছরও লেগে যেতে পারে। তাতে পরিস্থিতি মারাত্মক হয়ে যাবে। সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে আর মাস্ক ব্যবহার করেই করোনা মোকাবেলা সম্ভব হবেনা। প্রতিদিন সরকারের পক্ষ থেকে করোনা টিকার ব্যাপারে আশ^াস দেয়া হচ্ছে, কিন্তু সরকারি আশ^াসে বিশ^াস হারিয়ে ফেলেছে সাধারণ মানুষ। তিনি বলেন, এক বছরের বেশি সময় আগে সরকারকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা আরো উন্নত করতে বলেছি। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের প্রতিটি হাসপাতালেই ডাক্তার নার্সসহ প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগ দিতে বলেছিলাম। প্রতিটি হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরিক্ষার যন্ত্রপাতি এবং অক্সিজেন সহায়তা নিশ্চিত করতে বলেছিলাম। এখন হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের জন্য হাহাকার উঠছে। সরকারের ব্যর্থতায় করোনা এখন গ্রাম-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। চিকিৎসার অভাবে গ্রামের মানুষ করোনায় মারা যাচ্ছে, যার হিসেব নেই সরকারের কাছে। মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে পানি পড়া খেয়ে করোনা থেকে বাঁচতে চেষ্টা করছে, এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা আর হতে পারে না। আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালেও আইসিইউ তৈরী করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম সরকারকে। কিছুই করা হয়নি, সরকারি হাসপাতালে যে আইসিইউ আছে তার মধ্যে অনেকগুলোই অকেজো থাকে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে রাজধানীতে বেশ কিছু আইসিইউ আছে যেগুলো অত্যান্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ মানুষের পক্ষে বেসরকারি হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা নেয়া কখনোই সম্ভব নয়।
সভাপতির বক্তৃতায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জাতীয় পার্টি মহানগর উত্তর এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ শফিকুল ইসলাম সেন্টু বলেছেন, প্রতিটি দুর্যোগে সাধারণ মানুষের পাশে থেকেছে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি আজীবন হতদরিদ্র মানুষের স্বার্থে রাজনীতি করে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ উপলব্ধি করছেন আজ পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বেঁচে থাকলে সাধারণ মানুষের মাঝে এত হাহাকার থাকতো না। তাই সাধারণ মানুষ আগামীতে জাতীয় পার্টিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় দেখতে চায়। এ সময় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বিএসডি/ এসআই/এমএম