প্রতিষ্ঠাতা ১২টি ক্লাবের মধ্যে ১০টিই সরে দাঁড়িয়েছে। বাকি রয়েছে শুধু রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা। অর্থাৎ প্রস্তাবিত ইউরোপিয়ান সুপার লিগ হয়ে গেছে ‘এল ক্লাসিকো’ লিগ। এ দুটি ক্লাবের কেউ এখনো সুপার লিগ থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। যদিও বিশ্বব্যাপী মহাবিতর্কিত এ লিগ যে হচ্ছে না, তা কালই বুঝিয়ে দিয়েছেন সুপার লিগের ভাইস চেয়ারম্যান এবং জুভেন্টাস সভাপতি আন্দ্রেয়া আনেয়েল্লি, ‘সত্যি কথা বলতে, খোলাখুলিভাবে বললে, না। বর্তমান পরিস্থিতিতে এই লিগ আয়োজন করা সম্ভব নয়।’ কিন্তু ফ্লোরেন্তিনো পেরেজ কি তা বুঝতে পেরেছেন? নাকি সবকিছু বুঝেও স্রেফ নিজের ভাবমূর্তি ঠিক রাখতে না বোঝার ভান করছেন!
পরের কথাটা সত্যি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ভীষণভাবে সমালোচিত হওয়া এই সুপার লিগ প্রকল্পের হোতা হিসেবে দেখা হচ্ছে আনেয়েল্লি ও পেরেজকে। আনেয়েল্লি নিজের অবস্থান থেকে সরে এলেও পেরেজের কথা শুনলে মনে হবে, রিয়াল সভাপতি নিজের চিন্তাভাবনায় গোঁ ধরে বসে আছেন! বর্তমান পরিস্থিতি বিচারে সুপার লিগকে ‘অপেক্ষমাণ’ টুর্নামেন্ট হিসেবে দেখছেন পেরেজ। অর্থাৎ এখন হয়তো আয়োজিত হবে না, কিন্তু সামনে একদিন হবে। চ্যাম্পিয়নস লিগ বাদ দিয়ে ১২ দল মিলে এই টুর্নামেন্ট নিজেদের পরিকল্পনা অনুযায়ী এগিয়ে নিতে না পারার কারণও খুঁজে বের করেছেন পেরেজ। স্প্যানিশ এই রাজনীতিক ও ব্যবসায়ী এখনো দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, সুপার লিগ ‘ফুটবল বাঁচাতে পারত’, কিন্তু টুর্নামেন্টটি ‘বাজেভাবে উপস্থাপন করায়’ সেটি আপাতত হচ্ছে না।
স্প্যানিশ টিভি অনুষ্ঠান ‘এল লারগুয়েরো’কে কাল রিয়াল সভাপতি বলেন, ‘উয়েফার কর্মকাণ্ডে আমি বিস্মিত। মনে হচ্ছে, আমরা যেন পারমাণবিক বোমা মেরেছি। আমাদের ভুলটা কী? আমরা হয়তো এটা (সুপার লিগ) বাজেভাবে উপস্থাপন করেছি। কিন্তু তারা কেন আমাদের কথা বলতে দিল না।’ সুপার লিগের প্রকল্প থেকে সবার আগে বেরিয়ে আসে ছয়টি ইংলিশ ক্লাব—ম্যানচেস্টার সিটি, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, চেলসি, আর্সেনাল, টটেনহাম ও লিভারপুল। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২০ দলের পয়েন্ট টেবিলে সব কটিই বড় ক্লাব। পেরেজ তাদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘ইংল্যান্ডে ৬টি ক্লাব হারছে এবং বাকি ১৪টি ক্লাব জিতছে—এটা ন্যায্য হতে পারে না। কিংবা স্পেনে বড় ক্লাবগুলো টাকা হারাচ্ছে, কিন্তু ছোট ক্লাবগুলো আয় করছে। ফুটবল হলো পিরামিডের মতো, শীর্ষবিন্দুতে টাকা থাকলে তা ঝরে পড়বে এবং নিচে সবাই কিছু না কিছু পাবে।’
চ্যাম্পিয়নস লিগে বিজয়ী দল পেয়ে থাকে প্রায় ৮ কোটি ইউরো। কিন্তু সুপার লিগের প্রতিষ্ঠাতা ক্লাবগুলো প্রতি মৌসুমে এর চেয়ে অনেক বেশি অর্থ আয় করবে—এমন কথাই বলা হয়েছিল। ১০টি ক্লাব এ প্রকল্প থেকে সরে আসায় তা এখন প্রায় ভেস্তে যাওয়ার মুখে। কিন্তু পেরেজ এখনো বুঝিয়ে যাচ্ছেন, সুপার লিগের পরিকল্পনা ফুটবলকে বাঁচানোর স্বার্থেই, ‘শীর্ষ জায়গায় কিন্তু ফেদেরারকে নাদালের সঙ্গে খেলতে হয়। র্যাঙ্কিংয়ে ৮০তম কারও বিপক্ষে নাদালের খেলা লোকে দেখতে চায় না।’ পেরেজ এরপর দুঃখ করে বলেছেন, ‘আমি এমন আগ্রাসী আচরণ কখনো দেখিনি। উয়েফা সভাপতি থেকে ঘরোয়া লিগেও সবাই এমন করছে। মনে করা হচ্ছে, আমরা ফুটবলকে মেরে ফেলেছি। অথচ আমরা ফুটবলকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি।’
ইউরোপের অন্যতম সেরা ১২টি দল নিয়ে সুপার লিগ আয়োজিত হলে সেই সূচিতে তারকা ফুটবলাররা নিয়মিতই একে অপরের মুখোমুখি হতেন। তাতে সবার আগ্রহ থাকায় প্রচুর আয়ের অঙ্ক কষে এ টুর্নামেন্টের প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে দেওয়া হয় সম্প্রতি। পেরেজ তারকা খেলোয়াড়দের নিয়মিত মুখোমুখি হওয়া বোঝাতেই নিজের ‘ভাঙা রেকর্ড’-এ ফেদেরার-নাদাল লড়াইয়ের উদাহরণ টানেন। তবে সুপার লিগ প্রকল্পের যে অপমৃত্যু ঘটেছে, তা একটি কথায় বুঝিয়ে দেন পেরেজ, ‘খুব খারাপ এবং হতাশ লাগছে। এটা (সুপার লিগ) নিয়ে আমরা বছরের পর বছর কাজ করেছি। অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ফুটবলকে কীভাবে আরও বড় করা যায়, সেটা বের করার চেষ্টা করেছি। চ্যাম্পিয়নস লিগ সেকেলে হয়ে পড়েছে। এটা শুধু কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই আগ্রহ জাগাতে পারে।’
পেরেজ এরপর বলেন, ‘কেউ এসে সুপার লিগের বদলে অন্য পরিকল্পনা জানাতে পারেন। এটা ধনী-গরিবের বিষয় নয়, মাদ্রিদ ধনী নয়, ট্রফিতে সমৃদ্ধ। আমি এটুকু বলতে পারি, ফুটবলের ভালোর জন্যই এসব করছি।’