সোনিয়ার বাড়ি সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলায়। সে স্থানীয় উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। তার বিয়ে ঠেকানোর ঘটনাটি ঘটে গত ৪ জুলাই। এখন সোনিয়া মা-বাবার সঙ্গে বাড়িতেই থাকছে। পড়াশোনা করছে। সে চিকিৎসক হতে চায়।
সোনিয়ার স্কুল উজ্জীবনী ইনস্টিটিউট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ ইকবাল আলম বলেন, ‘সোনিয়া খুবই মেধাবী ছাত্রী। আগামী বছর সে এসএসসি পরীক্ষা দেবে। ওর পড়াশোনা যেন বিঘ্নিত না হয়, সে কারণে স্কুলে ওর সব খরচ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকদেরও বলেছি, তাঁরা যেন সোনিয়াকে পড়াশোনায় সহযোগিতা করেন।’
যা ঘটেছিল সেদিন
সোনিয়া দুই বোনের মধ্যে ছোট। তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবার তার বিয়ের আয়োজন করেছিল। গত ৪ জুলাই পাত্রপক্ষ তাকে দেখতে আসে এবং সেদিনই বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সারার সিদ্ধান্ত হয়। সোনিয়া তখন জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এবং সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশু সহায়তা নম্বর ১০৯৮-এ ফোন করে সহায়তা চায়।
সোনিয়ার হাতে অপেক্ষা করার মতো সময় ছিল না। বিয়ের আয়োজনের মধ্যেই মানসিক চাপের মুখে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হয় সে। তখন খবর পেয়ে তাকে সহায়তায় এগিয়ে আসে স্থানীয় বেসরকারি সংস্থা প্রেরণা নারী সংগঠন।
সোনিয়াকে কীভাবে সহায়তা করা হয়েছিল, তা জানান সাতক্ষীরা জেলার পেশাজীবীদের নিয়ে গঠিত বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রশাসনিক প্রধান মো. সাকিবুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগমাধ্যম মেসেঞ্জারে একটি গ্রুপ খুলেছেন। এতে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের ১৫৩ জন সরকারি কর্মকর্তা রয়েছেন। এই গ্রুপে তিনি সোনিয়ার ঘটনাটি জানান। তখন কালীগঞ্জের ইউএনও ঘটনাটি সম্পর্কে খোঁজ নিতে উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা অর্ণা চক্রবর্তীকে দায়িত্ব দেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, গ্রামবাসীদের কাছ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানতে পারেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ঘটকদের প্ররোচনায় সোনিয়ার বাবা তার বিয়ের চেষ্টা করে আসছিলেন। মেয়েটি একক প্রচেষ্টায় বিয়ে ঠেকিয়ে রেখেছে। অষ্টম শ্রেণিতে মেধাবৃত্তি (ট্যালেন্টপুল) পাওয়া সোনিয়ার পড়াশোনায় প্রবল আগ্রহ। তখন উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তার কার্যালয়ে তার বাবাকে ডাকা হয়। তিনি অঙ্গীকার করেন যে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়ার আগে সোনিয়ার বিয়ে দেবেন না।
সোনিয়াকে সহায়তা করা প্রেরণা নারী সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক শম্পা গোস্বামী বলেন, ‘ঘটনার পরদিন মেয়েটিকে যখন দেখি, তখন সে মানসিকভাবে বিধ্বস্ত, দুর্বল ও ভীত ছিল। সে নিজের বইগুলো নিয়ে এসেছিল। এ থেকে বোঝা যায় ওর পড়াশোনায় কতটা আগ্রহ।’
‘অন্যদের উদ্বুদ্ধ করবে’
সোনিয়া জানায়, সে বেসরকারি সংস্থার নিরাপদ আশ্রয় থেকে বাড়ি ফিরতে পেরেছে। মা-বাবাই তাকে নিয়ে এসেছেন। তার ওপর অভিভাবকেরা আগের মতো রেগে নেই। আপাতত তার একটাই প্রত্যাশা, মা-বাবা ভালোবেসে তাকে বুকে টেনে নিক, পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিক।
সোনিয়ার বাল্যবিবাহ ঠেকানো অন্য মেয়েদেরও উদ্বুদ্ধ করবে বলে মনে করেন কালীগঞ্জের ইউএনও খন্দকার রবিউল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, অল্প বয়সী মেয়েরা সোনিয়ার মতো সাহস রাখতে পারে না বলেই ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ের শিকার হয়।
বিএসডি/ এলএল