বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতায় অবদান রয়েছে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের। সেই স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের একটি জার্সি আজ (রোববার) মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করা হয়। আজ দুপুরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগে এক অনুষ্ঠানে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের পক্ষ থেকে মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হকের হাতে জার্সি তুলে দেওয়া হয়। এই সময় উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব আকতার হোসেনসহ আরও অনেকে।
নরসিংদীর ফুটবলার সুভাষ চন্দ্র সাহার ১৩ জার্সিটি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শোভা পাবে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলে জীবিত আর কোনো সদস্যের কাছে জার্সি নেই। একমাত্র সুভাষের কাছেই ছিল। সুভাষ চন্দ্র সাহা তার জার্সিটি সযত্নে রেখে দিয়েছিলেন। সেই একমাত্র জার্সিটি আজ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের জন্য হস্তান্তর করা হয়।
সত্তর উর্ধ্ব এই ফুটবলার জার্সি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এই জার্সিটি অমূল্য। এটি যে এখনো সযত্নে রয়েছে এর অবদান আমার চেয়ে আমার স্ত্রীর বেশি। তিনিই মূলত এই জার্সির যত্ন করেছে।’ ১৩ নম্বর জার্সিটি এখন থেকে শোভা পাবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে।
আজকের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সচিব ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের কর্মকর্তা সারা জাকেরসহ আরও অনেকে। সারা জাকের এই জার্সির অবস্থান সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের জাদুঘরের কিউরেটর বিশেষ স্থানে এটি রাখবে। সুনির্দিষ্ট স্থান এখনো ঠিক হয়নি।’
স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের ম্যানেজার তানভীর মাজহার তান্না আজকের এই অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা। তার সঙ্গে আজ এই জার্সি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কানাডা থেকে ২৭ বছর পর আসা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম ফুটবলার এনায়েতুর রহমান, আশরাফ আলী ও সুভাষ চন্দ্র সাহা। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের তিন ফুটবলার ও ম্যানেজার ‘৭১-এ ভারতে কাটানো দিনগুলোর কথা স্মরণ করে বলেন, ‘আমরা অনেক কষ্ট করেছি ভারতে। দুই দিনের বেশি সময় ট্রেনে শুয়েও কাটিয়েছি। আমরা সবাই দেশের জন্যই মূলত খেলেছি এবং প্রচার করতে চেয়েছি বাংলাদেশ নতুন স্বাধীন দেশ হচ্ছে।’
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা স্বরাষ্টমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল নিজেও মুক্তিযোদ্ধা। তিনি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘আমরা ঢাকায় যুদ্ধ করেছি আর তারা দেশের বাইরে আমাদের জন্য খেলেছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অবদান অনেক। যুদ্ধের সময় আমরা প্রতিদিন স্বাধীন বাংলা বেতার, চরমপত্র অনুসরণ করতাম। সেই সময়গুলোতে স্বাধীন বাংলা দলের খবর আগ্রহ নিয়ে শোনতাম।’
মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে রাষ্ট্র থেকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত।’ যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়ায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। এর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়কেও ধন্যবাদ তারা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের জার্সি সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ায়। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সব সময় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সঙ্গে রয়েছে।’
১৯৭১ সালে ফুটবলাররা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ না করলেও মুক্তিযুদ্ধে অনেক ভূমিকা রেখেছেন। ফুটবলাররা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল গঠন করেন। এই দল ভারতে বেশ কয়েকটি ম্যাচ খেলে। এই প্রদশর্নী ম্যাচগুলোর প্রাপ্ত অর্থ মুক্তিযুদ্ধ তহবিলে দেওয়া হয়।