আন্তর্জাতিক ডেস্ক
হংকংয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নির্বাচনে জয় পেয়েছেন চীনপন্থি ‘দেশপ্রেমিক’ প্রার্থীরা। রোববার (১৯ ডিসেম্বর) এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য হংকংয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে রোববার। ভূখণ্ডটিকে নিয়ে চীন নতুন করে কঠোর আইন চালু করার পর এই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো।
সোমবার (২০ ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স। বেইজিংয়ের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, চীনের বাছাই করা ‘দেশপ্রেমিকরাই’ কেবল এই নির্বাচনে প্রার্থী হতে পেরেছিলেন। অবশ্য সমালোচকরা হংকংয়ের এই নির্বাচনকে অগণতান্ত্রিক বলে মনে করছেন।
রয়টার্স বলছে, রোববারের নির্বাচনে হংকংয়ে ভোট পড়েছে মাত্র ৩০ দশমিক ২ শতাংশ। যা ২০১৬ সালের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের তুলনায় প্রায় অর্ধেক এবং তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে কম। প্রতিবেদন অনুযায়ী, হংকংয়ের লেজিসলেটিভ কাউন্সিল নির্বাচনে ৪৪ লাখ ৭২ হাজার ৮৬৩ জন নথিভুক্ত ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন মাত্র ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৬৮০ জন।
এর আগে চলতি বছরের মার্চ মাসে হংকংয়ে নির্বাচনী আইন সংস্কারে প্রস্তাবিত আইন চূড়ান্ত করে চীন। মূলত ভূখণ্ডটির ওপর বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণ আরও বাড়াতে এবং চীন-বিরোধী গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকারীদের দমাতেই এই পদক্ষেপ নেয় দেশটি। চীন সেসময় দাবি করে- দেশপ্রেমিকদের হাতেই যেন হংকংয়ের দায়িত্ব থাকে; এটা নিশ্চিত করতেই নির্বাচনী আইন সংস্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর ফলে শহরটির ওপর চীনের নিয়ন্ত্রণ আরও বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ, হংকংয়ের পার্লামেন্টে সরকারবিরোধী কেউ থাকবে না। আরও স্পষ্ট করে বললে, হংকংয়ের পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতা হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার আগে চীনের মূল ভূখণ্ডের প্রতি তার বিশ্বস্ততা ও আনুগত্য পরীক্ষা করে দেখা হবে।
হংকংয়ের নির্বাজনী আইন নিয়ে এখানেই মূলত বিতর্ক। এছাড়া আইনসভার ৯০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন বলে বিধান রাখা হয়। গত মার্চে চীন এই আইন চূড়ান্ত করার পর জুন মাসে হংকংয়ের আইনসভায় সেটি অনুমোদিত হয়।
আইনসভার ৪০টি আসনে প্রতিনিধি নির্ধারণ করে দেয় দেড় হাজার সদস্যের একটি কমিটি। কমিটিতে শুধুমাত্র কট্টর চীনপন্থিরাই আছেন। অন্যদিকে ৩০ জনকে বেছে নেয় বেইজিংপন্থি আরেকটি কমিটি। তবে এই প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ব্যবসায়িক গোষ্ঠী ও স্পেশাল ইন্টারেস্ট গ্রুপের প্রতিনিধিত্ব করেন।
আইনসভার বাকি যে ২০টি আসন সেখানেও কেবল অংশ নিতে পারেন চীনের প্রতি আনুগত্য প্রমাণ করা ব্যক্তিরাই। রোববার ১৪ ঘণ্টা ধরে ভোটগ্রহণ চলে। সাত ঘণ্টা পরে ভোট পড়েছিল মাত্র ১৯ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত সেটি ৩০ শতাংশে গিয়ে পৌঁছায়। ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে চীনের দখলে যাওয়ার পর হংকংয়ে এতো কম ভোট কখনও পড়েনি।
এদিকে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে হংকংয়ের নেতা ক্যারি লাম জানিয়েছেন, নির্বাচনে ভোটের হার সত্যিকার অর্থেই অনেক কম এবং এর পেছনে বিশেষ কোনো কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘ভোটের হার কম হলেও ১৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তাই এটিও বলা যাবে না যে, এই নির্বাচনকে নাগরিকরা সমর্থন করেনি।’
অবশ্য ভোটারদের বুথে টানতে কম চেষ্টা করেনি হংকং কর্তৃপক্ষ। যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিতে বুথগুলোতে দশ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়। এছাড়া ভোট দিতে আসার জন্য যানবাহনে চড়লে তাতে কোনো ভাড়া দিতে হবে না বলেও ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ।
এসএ