নিজস্ব প্রতিবেদক
হাওর-জলাভূমি সুরক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগের দাবি তুলেছেন আলোচকরা। পাশাপাশি তারা বলছেন, আমরা হাওরকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দিতে পারি না। হাওর-জলাভূমি সুরক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আমাদের মানসিকতার এবং কাঠামোগত দুটোরই পরিবর্তন প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে হাওরের প্রাণ-প্রকৃতি, পরিবেশ, জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও মানবাধিকার সুরক্ষায় এএলআরডি, বারসিক এবং বেলার সমন্বিত উদ্যোগে ‘জাতীয় হাওর সংলাপ-২০২৪’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইন্ডিজেনাস নলেজ (বারসিক) পরিচালক সৈয়দ আলী বিশ্বাস বলেন, হাওর উপযোগী কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতকে গুরুত্ব না দেওয়ার কারণে হাওরাঞ্চলে কোম্পানি নির্ভর রাসায়নিক কৃষি, বাণিজ্যিক ইজারাদার এদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওরাঞ্চলে ২৩০ প্রজাতির দেশি মাছের বৈচিত্র্য ক্রমশ কমছে। হাওর-জলাভূমি ইজারা দিয়ে বাণিজ্যিক মৎস্য খাতকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল ও অভয়াশ্রমগুলো বিনষ্ট হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, হাওর হলো সৌম্য দর্শন পুণ্যভূমি। সকলের অংশগ্রহণে হাওরের সম্পদ ব্যবস্থাপনা ও রক্ষার পরিকল্পনা করতে হবে। জলাভূমির ইকোসিস্টেম ভ্যালু এবং ধানি জমির ভ্যালুর মধ্যে হাজার গুণ পার্থক্য রয়েছে। জলাভূমিকে ধানের জমিতে পরিণত করা একটি ইনোসেন্ট (নিষ্পাপ) অপরাধ। এটা বন্ধ করতে হবে।
বেলার প্রধান নির্বাহী (ভারপ্রাপ্ত) তাসলিমা ইসলাম বলেন, আমাদের পানি আইন, পরিবেশ আইন, প্রাকৃতিক জলাধার সুরক্ষা আইন রয়েছে। হাওরের সুরক্ষায় এ আইনগুলো ব্যবহার করতে পারি। প্রাকৃতিক জলাধার সুরক্ষা আইনে জলাধারের শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না, ভরাট করা যাবে না, তা সুস্পষ্টভাবে বলা আছে। ২০১২ সালের ওয়াইল্ড লাইফ প্রোটেকশন অ্যাক্ট ধরেও আমরা হাওর সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে পারি। হাওরের সুনির্দিষ্ট কোনো আইন এখনো পাস হয়নি। খসড়া এ আইনে হাওরের সুরক্ষা বা সংরক্ষণের দায়িত্ব সঠিকভাবে উল্লেখ করা হয়নি। আইনটি দ্রুত পাস করে বাস্তবায়নে যেতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের নির্বাহী সভাপতি ড. লেলিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে কোনো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের সময় পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের বিষয়টি নিয়ে কোনো অ্যাসেসমেন্ট করা হয় না। মানুষের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে হলে আশপাশের অন্যান্য প্রাণিকুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখা জরুরি। হাওরে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ করতে গিয়ে যদি হাওর নষ্ট হয়ে যায় তাহলে তার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব পড়বে হাওরের পরিবেশ ও বসবাসকারী মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিবেশ ও বন শাখার উপ-প্রধান মো. বেলাল উদ্দীন বিশ্বাস বলেন, এই বাঁধের কারণে হাওরের ইকোলজিক্যাল সিস্টেমের ভারসাম্য থাকে না। মাছের অভয়ারণ্য তৈরি হতে পারে না। হাওরের উন্নয়নে একটি অ্যাপেক্স বডি তৈরির প্রয়োজনীয়তা আছে।
সভাপতির বক্তব্যে এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা বলেন, আমাদের প্রথাগত ধারণার জায়গায় আমূল সংস্কার করতে হলে সমন্বয়হীনতা থাকা চলবে না। প্রশাসনকে ভেঙে নতুন করে সাজাতে হবে। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের জন্য আমাদের মানসিকতার এবং কাঠামোগত দুটোরই পরিবর্তন প্রয়োজন। আমরা হাওরকে কোনোভাবেই ধ্বংস হতে দিতে পারি না।