খেলাধূলা প্রতিনিধি:
শ্রীলংকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে প্রথম ইনিংসে ২৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়েও অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। এমন বীরোচিত ঘুরে দাঁড়ানোর পুনরাবৃত্তি হলো না। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারানো বাংলাদেশ দুই হাফসেঞ্চুরির পরও অলআউট ১৬৯ রানে। তাতে জুটল ১০ উইকেটের বড় পরাজয়। কোনো উইকেট না হারিয়েই ৩ ওভারের মধ্যে প্রয়োজনীয় রানগুলো তুলে নেয় অতিথিরা। এতে ১-০তে সিরিজ জিতে নিল দিমুথ করুনারত্নের দল।
চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ২৩ রানে ৪ উইকেট হারানোর পর মুশফিকুর রহিম ও লিটন কুমার দাসের ওপর আরেকবার ভার পড়ে ইনিংসটা মেরামতের। তবে এবার পারলেন না তারা দলের ত্রাতা হতে। গতকাল সকালে ৩৪/৪ স্কোর নিয়ে ব্যাটিংয়ে নামেন দুজন। দলীয় ৫৩ রানে মুশফিকের বিদায় ঘটে। তাকে পরিষ্কার বোল্ড করেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কাসুন রাজিথা। এরপর লিটনের সঙ্গে যোগ দেন সাকিব আল হাসান। তিনি আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন, লাঞ্চের আগে কোনো উইকেট হারানো চলবে না এবং তিনি তিন ঘণ্টার মতো ব্যাটিং করতে চান। মুশফিকের বিদায়ের পর লিটনকে নিয়ে ১০৩ রানের জুটি গড়ে কথা রেখেছেন সাকিব। যদিও তা দলের হার এড়ানোর জন্য যথেষ্ট ছিল না।
লিটন এই টেস্টের দ্বিতীয় হাফসেঞ্চুরি করে আসিথা ফার্নান্দোকে ফিরতি বলে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে যান (১৫৬/৬)। তখনই দলের আশা ম্রীয়মান হতে থাকে এবং এরপর ৪৬ বলের মধ্যে শেষ বাংলাদেশ ইনিংস! শেষ চার উইকেটের মধ্যে তিনটিই নিয়েছেন আসিথা, বাকি একটি নেন রমেশ মেন্ডিস। ৫২তম ওভারের প্রথম বলে সাকিব ক্যাচ দেন উইকেটকিপার নিরোশান ডিকবেলাকে। মোসাদ্দেক হোসেনকে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন রমেশ। ৫৬তম ওভারে পরপর দুই বলে তাইজুল ইসলাম (লেগ বিফোর) ও খালেদ আহমেদকে (বোল্ড) সাজঘরে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে অলআউট করেন আসিথা।
৫১ রানে ৬ উইকেট শিকার করেছেন পেসম্যান আসিথা, আর কাসুন রাজিথা নিয়েছেন ৪০ রানে দুটি উইকেট। দুই পেসারই নিলেন ৮ উইকেট, যারা প্রথম ইনিংসে শিকার করেন ৯টি। সব মিলে, বাংলাদেশের ২০ উইকেটের ১৭টিই নিলেন এ দুই পেসার। স্পিনাররা পেয়েছেন তিনটি।
হারের পর বাংলাদেশ দলনায়ক মুমিনুল হক বলেছেন, খুবই হতাশাজনক। আমরা কঠোর পরিশ্রম করেছি, যদিও গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভালো করতে পারিনি। এরপরও কিছু ইতিবাচক দিক খুঁজে পেয়েছি। মুশফিক ও লিটন ভালো খেলেছে, তাদের জন্য খারাপ লাগছে। নতুন বলে উভয় প্রান্ত থেকেই চাপ তৈরি করে খেলেছে শ্রীলংকা। এটা পুরোপুরি মানসিক খেলা। মানসিকভাবে যদি শক্ত না হওয়া যায় তবে পরের সিরিজে ফিরে আসা কঠিন। আমাদের বিশেষ করে পেস বোলিংয়ের দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
জয়ের জন্য ফাস্ট বোলারদের কৃতিত্ব দিলেন লংকান দলনায়ক করুনারত্নে। তিনি বলেন, আমাদের ফাস্ট বোলাররা ছিল অবিশ্বাস্য। তারাই ম্যাচের ছন্দটা এনে দিয়েছে। আমরা তো ভেবেছিলাম, এখানে স্পিনাররা কিছু উইকেট পাবে, কিন্তু তারা নিতে পেরেছে মাত্র তিনটি। তাদের জন্য শিক্ষণ পর্যায় হলেও আমি হতাশ (স্পিন নিয়ে)। কেননা সামনেই অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তান সিরিজ রয়েছে, কাজেই তাদের এগিয়ে আসতে হবে। এরপর দলের সামগ্রিক পারফরম্যান্সে আমি অনেক খুশি।
এটা বাংলাদেশের বিপক্ষে শ্রীলংকার ১৮তম জয়। ২৪ টেস্টের ইতিহাসে বাংলাদেশ জিততে পেরেছে মাত্র একটি। বাকি পাঁচটি টেস্ট ড্র হয়েছে। আজকের জয় পাওয়ায় আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে গুরুত্বপূর্ণ ১২ পয়েন্ট তুলে নিয়ে পাকিস্তানকে টপকে চারে উঠে গেল শ্রীলংকা।
বিএসডি/ এমআর