আন্তর্জাতিক ডেস্ক
গত বছর ২০২৪ সালে বহির্বিশ্বে রেকর্ড ৩১ হাজার ৮৭০ কোটি ডলারের যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে কোনো বছর এত বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করেনি দেশটি।
এমনকি গত বছরের আগের বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির হার বেড়েছে ২৯ শতাংশ।
এক প্রতিবেদনে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিদায়ের এ বছরটিতে বিশ্বজুড়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে ৩টি মার্কিন কোম্পানির যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম। এই কোম্পানিগুলো হলো লকহিড মার্টিন, জেনারেল ডায়নামিক্স এবং নর্থরোপ গ্রুমান। ব্যাপকমাত্রায় বিক্রির ফলে বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে অস্থিরতা সত্ত্বেও এই ৩ কোম্পানির শেয়ারের দাম বছরজুড়েই চড়া ছিল।
দেশটির নতুন প্রেসিডেন্ট এবং রিপাবলিকান পার্টির শীর্ষ নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পও এ ইস্যুতে বেশ মনোযোগী। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণাকালে ট্রাম্প বলেছিলেন যে তিনি চান যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো সদস্যভুক্ত দেশগুলো তাদের বার্ষিক বাজেটের ৫ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ রাখুক। বর্তমানে এই হার ২ শতাংশ।
সম্প্রতি দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ প্রসঙ্গে বলেছে, “অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয় ও রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী আঞ্চলিখ ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার ব্যাপারটি গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত।”
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৪ সালে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের জেরে ইউরোপসহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন মিত্রদেশ নিজেদের অস্ত্রভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য বিপুল পরিমাণ যুদ্ধাস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের ফরমায়েশ দিয়েছে মার্কিন বিভিন্ন অস্ত্র উৎপাদন কোম্পানির এজেন্টদের কাছে। মিত্র দেশগুলোর বিপুল পরিমাণ চাহিদা মেটাতে গিয়ে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে মার্কিন অস্ত্র প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তর পেন্টাগনের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর তুরস্কে ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার এবং ইসরায়েলের কাছে ১ হাজার ৮৮০ কোটি ডলার মূল্যের এফ ১৬ যুদ্ধবিমান বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে ওয়াশিংটন। একই সময়ে রোমানিয়ায়ি বিক্রি হয়েছে বেশ কয়েকটি এম১এ২ আব্রামস ট্যাংক, যেগুলোর সম্মিলিত মূল্য ২৫০ কেটি ডলার।
২০২৪ সালে বিভিন্ন দেশ থেকে মার্কিন অস্ত্র ক্রয়ের যেসব অর্ডার এসেছে, সেসব মেটাতে এ বছর তো বটেই, সামনের বছরও গড়িয়ে যেতে পারে। কারণ এসব অর্ডারের মধ্যে লাখ লাখ রাউন্ড গুলি ও আর্টিলারি গোলা, হাজার হাজার প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত সাঁজোয়া যান।
কোনো দেশ যদি যুক্তরাষ্ট্রের কোনো কোম্পানির কাছ থেকে অস্ত্র-সামরিক সরঞ্জাম কিনতে চায়— সেক্ষেত্রে দু’টি পথ রয়েছে— কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা কিংবা অস্ত্র কিনতে চাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করা। অস্ত্র ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে উভয় ক্ষেত্রেই সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন পড়ে।
পেন্টাগনের তথ্য অনুসারে, ২০২৪ সালে কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে ২০ হাজার ৮০ কোটি ডলারের অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র; আগের বছর বা ২০২৩ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ১৫ হাজার ৭৫০ কোটি ডলার।
আর সরকারি যোগাযোগের মাধ্যমে ২০২৪ সালে ১১ হাাজর ৭৯০ কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও সরঞ্জাম রপ্তানি করা হয়েছে; ২০২৩ সালে এই অর্থের পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ৯০ মিলিয়ন ডলার।
সূত্র : রয়টার্স