আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
পাঁচ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য করোনা টিকার অনুমোদন দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। আগামী অক্টোবর মাসের শেষ নাগাদ অল্পবয়সী এই শিশুদের জন্য ফাইজারের টিকাকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছেন দেশটির শীর্ষ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দু’টি সূত্রের বরাত দিয়ে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
সূত্রগুলো রয়টার্সকে জানিয়েছে, মার্কিন সংস্থা ফাইজার ও জার্মানির বায়োএনটেকের যৌথভাবে তৈরি এই কোভিড-১৯ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যাপ্ত তথ্য চলতি সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে হাতে পাওয়া যাবে। এরপরই পাঁচ থেকে ১১ বছরের শিশুদের ক্ষেত্রে জরুরি ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেতে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনে (এফডিএ) আবেদন করা যাবে।
জরুরি ব্যবহারের জন্য আবেদন লাভের পর ছোট শিশুদের শরীরে টিকার নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা খতিয়ে দেখার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে এফডিএ সিদ্ধান্ত জানাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রয়টার্স বলছে, ছোট ছোট এই শিশুদের জন্য টিকার অনুমোদন দেওয়া হবে কি না, সেটি জানতে আগ্রহ সহকারে অপেক্ষা করছেন লাখ লাখ মার্কিন নাগরিক। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী হওয়ার মধ্যেই যেসব অভিভাবক তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠিয়েছিলেন, তারা এই সিদ্ধান্তের দিকে তাকিয়ে আছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথের (এনআইএইচ) হাজার হাজার কর্মীর অংশগ্রহণে শুক্রবার একটি অনলাইন মিটিংয়ে অংশ নেন দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. অ্যান্থনি ফাউসি। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলছে, অক্টোবরের শেষের দিকে টিকার অনুমোদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হতে পারে বলে ওই মিটিংয়ে ইঙ্গিত দেন তিনি।
দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, ওই সময়টিতেই ফাইজারের টিকাকে অনুমোদন দেওয়া হতে পারে বলে মনে করছে এফডিএ কর্তৃপক্ষও।
ড. ফাউসি বলেছেন, সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ফাইজার যদি এফডিএ’র কাছে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য আবেদন করে আর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তথ্য যদি অনুকূলে থাকে, তাহলে অক্টোবরের প্রথম দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যেই অনুমোদন দেওয়া সম্ভব হবে।
উল্লেখ্য, তিন সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পাঁচ লক্ষাধিক শিশু করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। তাদের বয়স ১১ বছরের মধ্যে এবং এখনও করোনার টিকা দেওয়া হয়নি। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এখনো ১২ বছরের নিচে কোনো শিশুকে টিকা দেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা বারবার সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, সংক্রণের ঊর্ধ্বগতিতে তৃতীয় ঢেউ আসার ইঙ্গিত স্পষ্ট। বিশ্বে করোনাভাইরাসের প্রথম ও দ্বিতীয় দফার ঢেউয়ের তুলনায় তৃতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে শিশুরা। বিশেষজ্ঞদের সেই পূর্বাভাসও বোধহয় মিলে যাচ্ছে।
আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিকস জানিয়েছে, তাদের কাছে থাকা তথ্য অনুযায়ী গত মাসের ৫ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত ২১ দিনে পাঁচ লাখের বেশি শিশু মহামারি করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছে। শুধু ১৯ থেকে ২৬ আগস্ট পর্যন্ত এক সপ্তাহে অন্তত ২ লাখ ৩ হাজার ৯৬২ শিশুর কোভিড শনাক্ত হয়েছে। জুনে শিশু-সংক্রমণ ছিল সপ্তাহে সাড়ে ৮ হাজার মতো। দুই মাসে সংক্রমণ বেড়েছে ২৫ গুণ।
বিশেষজ্ঞদের কথায়, যে সব শিশু টিকা পায়নি তারাই বেশি ভাইরাসটিতে সংক্রমিত হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রে কিশোর-কিশোরীদের টিকা নেওয়ার হার বেশ কম।