নিজস্ব প্রতিবেদক
দেশের অন্যান্য রাজনৈতিক দল না চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একার পক্ষে আর্থিকভাবে সহযোগিতাকারীদের নাম প্রকাশ সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
শুক্রবার (৭ মার্চ) রাজধানীর বাংলামোটরে জাতীয় নাগরিক পার্টির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
নাগরিক কমিটিকে আর্থিকভাবে কারা সাহায্য করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমাদের আর্থিক জায়গা নিয়ে কথা বলা হচ্ছে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে আমরাও চাই পরিবর্তনটা আসুক। কারা আর্থিকভাবে সহায়তা করছে, কোন খাতে সেটা ব্যয় হচ্ছে। এই সংস্কৃতিটা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসুক, এই সংস্কারটাও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আসুক। আমাদের জায়গা থেকে আমরাও দাবি করছি।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, এককভাবে এই সংস্কৃতি কিন্তু আমাদের পক্ষে করা সম্ভব না। আমাদের কারা আর্থিকভাবে সহযোগিতা করছে আমরা যদি তাদের নাম প্রকাশ করি, তারা কোনোভাবে ক্ষতির শিকার হবে না সেই নিশ্চয়তা সরকারের পক্ষ থেকে দিতে হবে। সেই সংস্কৃতি তো বাংলাদেশে এখনো তৈরি করা যায়নি। কিন্তু আমরা চাই সেই সংস্কৃতিটা হোক, সকল রাজনৈতিক দলই সেই সংস্কৃতি গ্রহণ করুক।
এনসিপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে এর আগেও নাগরিক কমিটি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে বার বার বলেছেন, গতকাল আমরা বলেছি- দ্রব্যমূল্য, তেলের দাম যেন নিয়ন্ত্রণে থাকে। দুর্নীতিবাজ, লুটেরা ব্যবসায়ী শ্রেণি যারা ছিল আমরা তাদের কখনোই সমর্থন করি না, করবো না।
অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, যারা দেশপ্রেমিক, দেশকে নতুনভাবে গড়তে চায়, ছাত্রদের নতুন উদ্যোগকে সমর্থন করছেন, সমাজে যে সৎ মানুষরা রয়েছেন তাদের থেকে আমরা সহযোগিতা চাচ্ছি। সাধারণ মানুষদের কাছ থেকেও আমরা সহযোগিতা চাচ্ছি, চাইবো। আর্থিক সহায়তার জন্য আমরা রিকশাওয়ালা থেকে শুরু করে সমাজের সকল শ্রেণি ও পেশার মানুষের কাছে যাবো। কারণ আমরা মনে করি এনসিপি জনগণের দল। জনগণের অর্থতেই এটা পরিচালিত হবে।
এনসিপির আর্থিক পলিসি টিম গঠন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন অর্থনীতিবিদরা আছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলছি একটা রাজনৈতিক আর্থিক পলিসি গঠনের জন্য। সে অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দল যেন পরিচালিত হতে পারে। সেটা হয়তো আমরা পরবর্তীতে উপস্থাপন করবো।
নির্বাচন নিয়ে এনসিপি সুনির্দিষ্ট কোনো বক্তব্য দিচ্ছে না কেন এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা নির্বাচনের সময়ের চেয়েও প্রেক্ষাপটের দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি। কোন প্রেক্ষাপটে আমরা নির্বাচনের দিকে যেতে পারি। আমরা আমাদের জায়গা থেকে দাবিটা জানাচ্ছি। জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ কিন্তু আলাদা জিনিস। জুলাই ঘোষণাপত্রের দাবি আরও অনেক আগেই উঠেছিলো। জুলাই সনদ প্রধান উপদেষ্টা নিজেই ঘোষণা দিয়েছেন। সংস্কারে ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে একটি চার্টার তৈরি হবে যে বাংলাদেশের সংস্কারের রূপরেখাটা কি রকম হবে, কি কি সংস্কার আমরা করবো, কি কি সংস্কার ভবিষ্যতে করবো, কি কি সংস্কার ধারাবাহিকতা থাকবে, রাজনৈতিক দলগুলোর সেই কমিটমেন্ট জনগণের কাছে দিতে হবে। সেটাকে আমরা বলছি জুলাই সনদ।
রয়টার্সে দেওয়া নিজের সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমি আমার ইন্টারভিউতে বলেছি, সময়ের চেয়ে প্রেক্ষাপট গুরুত্বপূর্ণ। এই গণঅভ্যুত্থানের পরে মানুষ যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলো, ন্যায় বিচারের আকাঙ্ক্ষা দেখেছিলো, সে দুইটা জায়গা মানুষকে দিতে হবে। তার আগে আমরা কীভাবে নির্বাচনের দিকে যাবো? সে কথাটাই আমরা বলছি, এটা যেন আমরা ভুলে না যাই। আমাদের বিচার, আমাদের সংস্কারের কমিটমেন্ট, এই পরিবর্তনগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা নির্বাচনের দিকে যাই। আর এটা আমরা স্পষ্টভাবেই বলেছি।