দ্রুত চিকিৎসায় ১০ মিনিটের ‘গ্রিন চ্যানেল’ জরুরি, বন্ধ থাকবে অন্য সেবা

স্ট্রোকের চিকিৎসায় সময়ই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্ট্রোক রোগীর ক্ষেত্রে প্রতিটি মিনিটই মূল্যবান। রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর পর অন্তত ১০ মিনিটের জন্য একটি ‘গ্রিন চ্যানেল’ চালু থাকা উচিত, যেখানে অন্য সব সেবা সাময়িক বন্ধ রেখে চিকিৎসা টিম একযোগে কাজ করবে। এই ১০ মিনিটেই নির্ধারিত হয় রোগী জীবিত থাকবে নাকি স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাবে।
রোববার (২ নভেম্বর) বিশ্ব স্ট্রোক দিবস উপলক্ষ্যে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক অফিসের কনফারেন্স হলে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিশ্বে প্রতি চারজনের একজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে, যার ৮৯ শতাংশই ঘটে উন্নয়নশীল দেশে। প্রতি মিনিটে প্রায় ১.৯ মিলিয়ন মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষ (নিউরন) মারা যায়। তাই রোগীকে হাসপাতালে আনার সাড়ে চার ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসা শুরু করা জরুরি। এতে তাকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলার সম্ভাবনা থাকে, আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আনলে অন্তত জীবন বাঁচানো যায়।
স্ট্রোকের ধরন ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি জানান, দুই প্রকার স্ট্রোক হয়—ইশকেমিক (রক্তনালী বন্ধ হয়ে) ৮৫ ভাগ এবং হিমোরেজিক (রক্তক্ষরণজনিত) ১৫ ভাগ। দুই ক্ষেত্রেই দ্রুত চিকিৎসা দিলে পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা অনেক বেশি।
ডা. শফিকুল ইসলাম বলেন, দেশে এখন দক্ষ চিকিৎসক ও উন্নত সুবিধা আছে, তবে স্ট্রোক ইউনিট ছাড়া কার্যকর চিকিৎসা শতভাগ সম্ভব নয়। ঢামেকসহ দেশের সব বড় হাসপাতালে আলাদা স্ট্রোক ইউনিট স্থাপন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, অসংক্রামক রোগের ওষুধ বন্ধ করলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়। মানুষকে সুশৃঙ্খল জীবনযাপন ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
স্ট্রোক প্রতিরোধে জীবনযাপনের পরিবর্তন ও ব্যায়ামের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ব্যায়াম হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ওষুধ। এটি রক্ত তরল রাখে, রক্তনালী সচল রাখে, এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেক কমায়।
তিনি বলেন, স্ট্রোকের ছয়টি মূল কারণ হলো—হাইপারটেনশন, ডায়াবেটিস, আসক্তি, নিষ্ক্রিয় জীবনযাপন, অতিরিক্ত কোলেস্টেরল এবং ঘুমের অভাব। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ‘ডিসিপ্লিনড লাইফস্টাইল’ ছাড়া বিকল্প নেই।
ডা. শফিকুল যোগ করেন, স্ট্রোক প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য সারা দেশে স্ট্রোক সেন্টার গড়ে তুলতে হবে। ঢাকার বাইরে প্রতি ৫০–৬০ কিলোমিটারে একটি করে সেন্টার যথেষ্ট হবে। রাজধানীতে প্রতি ২৫ লাখ মানুষের জন্য একটি সেন্টার দরকার।
তিনি আরও বলেন, স্ট্রোকের চিকিৎসা বিদেশে গিয়ে করা সম্ভব নয়। এটি আপনার দেশেই করতে হবে, আপনার বাড়ির কাছেই করতে হবে। আমরা চাইলে আগামী ৮–১০ বছরের মধ্যে এই চিকিৎসায় বিশ্বমান অর্জন করতে পারি।
ঢামেকের ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মনিরুজ্জামান বলেন, সব রোগীর সার্জারি সম্ভব হয় না, বিশেষ করে বয়স্কদের ক্ষেত্রে। তাদের ফিজিক্যাল থেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা দিতে হয়।
মতবিনিময় সভায় স্ট্রোকের চিকিৎসায় ‘হটলাইন’ চালু এবং ‘স্ট্রোক অ্যাম্বুলেন্স সেবা’ শুরুর প্রস্তাব আসে।
উল্লেখ্য, দেশে চিকিৎসা শিক্ষার বৈশ্বিক স্বীকৃতি করণের (অ্যাক্রেডিটেশন) কার্যক্রম চলমান থাকায় নির্ধারিত দিনে দিবসটি পালিত হয়নি। চারদিন পর সচেতনতামূলক এ আয়োজন করে ঢামেক হাসপাতাল।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. আসাদুজ্জামান। সঞ্চালনা করেন নিউরোসার্জারি বিভাগের ডা. সুজন শরীফ।














