বকেয়া বেতনের দাবিতে ফের আন্দোলনে সিএইচসিপিরা

দীর্ঘ ১৬ মাস ধরে বেতন-ভাতা না পাওয়ার প্রতিবাদে কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট অফিস অবরুদ্ধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত ৬৩৪ জন কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রোভাইডাররা (সিএইচসিপি)। তাদের এই অবস্থান কর্মসূচির ফলে নিজ কার্যালয়ে একরকম অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. আখতারুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলনকারীরা বলছেন, আর কোনো আশ্বাসে আমরা আর ঘরে ফিরছি না।
মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে রাজধানীর মহাখালী বিএমআরসি ভবনে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ভেতরে অবস্থান নেন বেতনবঞ্চিত সিএইচসিপি কর্মীরা। এসময় তাদেরকে বেতন ভাতার দাবিতে নানা ধরনের স্লোগান দিতে শোনা যায়।
অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া কর্মীদের হাতে ছিল নানা দাবি-দাওয়া সংবলিত ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড। একটিতে লেখা ছিল—‘বেতন চাই, ন্যায্য প্রাপ্য চাই, ১৬ মাসের বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধ করতেই হবে’; ‘স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জানেন নাকি, ১৬ মাসের বেতন বাকি’; ‘বেতন না দিলে আন্দোলন, থামবে না থামবে না’।
অবস্থান কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেওয়া রাসেল আহমেদ নামের এক সিএইচসিপি কর্মী বলেন, আমরা স্বাস্থ্যখাতে মাঠপর্যায়ের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। কিন্তু ১৬ মাস ধরে কোনো বেতন পাচ্ছি না। এ অবস্থায় সংসার চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
রাসেল আহমেদ আরও বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনের ২৪(ঙ) ধারা অনুযায়ী আমাদের পদায়ন ও আর্থিক পাওনা পরিশোধের স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। অথচ তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। যতক্ষণ না পর্যন্ত পদায়ন দেওয়া হয়, আমাদের আন্দোলন চলবে।
অবস্থানকারীরা আরও জানান, ট্রাস্টের সাংগঠনিক কাঠামোয় নতুন সৃষ্ট পদগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ বা দায়িত্ব বণ্টন করা হয়নি। এতে কর্মীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
এদিকে নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়া কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান কর্মীদের বেতন-ভাতা সংক্রান্ত জটিলতা বিষয়ে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের চাকরি সংক্রান্ত বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার। কর্মীদের চাকরি তো আছেই, এবং তাদের নিয়োগ অনুমোদন আছে—এভ্রিথিং আছে। এই কর্মীদের শুধু বেতন দেওয়াটাই বাকি ছিল। আমি এই কর্মীদের বেতনটা দেবে এই মর্মে একটি আদেশ জারি করেছিলাম, কারণ তাদের শুধু এদেরকে বেতন দিয়ে দিলেই হয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, আমি যে অর্ডার করেছিলাম, মন্ত্রণালয় সেটা স্থগিত করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় যখন এই সিদ্ধান্তটি স্টোরিং করা হলো, তখন তারা এর কোনো সুস্পষ্ট কারণ ব্যাখ্যা করেনি। আমার মনে হয়, যেহেতু বিষয়টি এখন মন্ত্রণালয়ের উপর নির্ভর করছে, সেহেতু আমাদের এখানে আর কিছুই করার নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, তাদের কিন্তু সামান্য সংখ্যক কর্মী নয়; এটি ৬ শতাধিক কর্মীর ভবিষ্যৎ ও জীবিকার বিষয়। তবে আমরা যে মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছি, মনে হয় না মন্ত্রণালয়ের কেউ এই চিঠি পড়েছে। সমস্যাটা হলো, মন্ত্রণালয়ে আগের সব অফিসার পরিবর্তন হওয়ায় এই কর্মীদের কপালটা পুড়তে যাচ্ছে। কর্মীদেরকে বেতন ভাতে দিয়ে দেওয়া হোক—এই সিদ্ধান্তটি নিয়ে মন্ত্রণালয় যে জটিলতা তৈরি করছে, এটি কাম্য নয়।
এদিকে, অফিস অবরুদ্ধ থাকায় দিনের বেশিরভাগ সময় ট্রাস্টের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়ে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের কয়েক দফা আলোচনা হলেও এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান মেলেনি।
অংশগ্রহণকারীদের বক্তব্য অনুযায়ী, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই অবস্থান কর্মসূচি চলবে।














