প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ গড়ে তোলার দাবি

দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, স্পাইনাল ইনজুরি বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষদের জীবনে নতুন করে দাঁড়ানোর পথ তৈরি করে ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন। কিন্তু এখনো দেশের অনেক মেডিকেল কলেজে এই শাখার আলাদা বিভাগ নেই, আধুনিক থেরাপি সুবিধাও সীমিত। তাই পুনর্বাসন চিকিৎসা কার্যকরভাবে বিস্তারের জন্য প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) মিলনায়তনে জাতীয় ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন দিবস ২০২৫ উদযাপন অনুষ্ঠানে এই আহ্বান আসে।
বাংলাদেশ সোসাইটি অব ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশনের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য ছিল- সমন্বিত পুনর্বাসনে চাই সম্মিলিত প্রচেষ্টা।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম। সভাপতিত্ব করেন সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. তসলিম উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, বিএমইউর উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. মুজিবুর রহমান হাওলাদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. নাহরিন আক্তার ও সোসাইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. এম. এ. শাকুর।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, স্ট্রোক, দুর্ঘটনা, আর্থ্রাইটিস বা স্পাইনাল ইনজুরিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। এসব রোগে শুধু ওষুধ বা অস্ত্রোপচারই যথেষ্ট নয়- রোগীকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পুনর্বাসন চিকিৎসা অপরিহার্য। তাই প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ থাকা এখন সময়ের দাবি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা দেশের প্রথম রোবোটিক রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার স্থাপন করেছি, যা পুনর্বাসন চিকিৎসায় প্রযুক্তির এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। আধুনিক রোবোটিক থেরাপির মাধ্যমে রোগীরা দ্রুত ও কার্যকরভাবে সুস্থ হচ্ছেন। পুনর্বাসন চিকিৎসাকে জাতীয় পর্যায়ে শক্তিশালী করতে চিকিৎসক, থেরাপিস্ট, পরিবার ও সরকারের সমন্বিত উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি।
চিকিৎসকরা আমাদের নীরব নায়ক- উল্লেখ করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, খেলোয়াড়দের জন্য ফিজিক্যাল ও মেন্টাল রিহ্যাবিলিটেশন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পারফরম্যান্সে যেমন রান কাউন্ট হয়, কিন্তু আপনাদের (চিকিৎসকদের) পরিশ্রমের রান কেউ গুনে না। আপনাদের অবদান আমাদের সুস্থতা ও কর্মক্ষমতার পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি। আমরা আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ আপনাদের প্রতি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ডা. মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা বিশ্বাস করি- ‘ডিসএবিলিটি মানেই ডিজএবল নয়’। এটি আসলে ‘ডিফারেন্ট এবিলিটি’। যদি আমরা সীমাবদ্ধতার পাশে কিছু সক্ষমতা যোগ করতে পারি, তবে অক্ষমতা অনেকাংশে দূর হয়ে যায়। ফিজিক্যাল মেডিসিন ও রিহ্যাবিলিটেশন সেই সক্ষমতাই তৈরি করে- মানুষকে নতুন শক্তি, নতুন দক্ষতা ও নতুন আশার আলো দেয়।
তিনি বলেন, এই সেক্টরকে শক্তিশালী করতে হলে শুধু চিকিৎসক নয়, থেরাপিস্ট, নার্স, মনোবিজ্ঞানী ও পরিবারের সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। আমাদের লক্ষ্য হলো- প্রতিটি মেডিকেল কলেজে ফিজিক্যাল মেডিসিন বিভাগ গড়ে তোলা, যাতে দেশের প্রতিটি মানুষ পুনর্বাসন সেবা পেতে পারে।
এসময় অন্যান্য বক্তারা আরও বলেন, দুর্ঘটনা বা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় আক্রান্ত অনেক মানুষ সঠিক পুনর্বাসন না পাওয়ায় কর্মক্ষমতা হারান। দেশে পুনর্বাসন চিকিৎসাকে কার্যকরভাবে ছড়িয়ে দিতে হলে জেলা-উপজেলা পর্যায়েও থেরাপি সুবিধা বাড়াতে হবে। তারা মনে করেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় ফিজিক্যাল মেডিসিনকে অগ্রাধিকার না দিলে কিউর সম্পূর্ণ হয় না।














