জালিয়াতি করে গ্রাম পুলিশে চাকরি

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় বিপুল অর্থের বিনিময়ে বয়স জালিয়াতি করে গ্রাম পুলিশে চাকরি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। জালিয়াতির মাধ্যমে গ্রাম পুলিশে নিয়োগ দিয়ে একটি সিন্ডিকেট চক্র হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
জানা গেছে, কুড়িগ্রাম জেলা থেকে ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন উপজেলা রৌমারী। এই উপজেলার যাদুরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা হাফিজুর রহমান। সংসার জীবনে তার রয়েছে স্ত্রী, দুই ছেলে আর এক মেয়ে। সন্তানদের বিয়ে দিয়েছেন কয়েক বছর আগে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হাফিজুর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ওই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সরবেশ আলীর সহায়তায় জন্ম নিবন্ধনে বয়স জালিয়াতি করে ২৯ বছর দেখিয়ে গ্রাম পুলিশে চাকরি নিয়েছেন। চলতি বছরের গত আগস্ট উপজেলায় ৫টি ইউনিয়নে ১৯ জন গ্রাম পুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি প্রায় ৪ লাখ টাকা করে গড়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট চক্রটি। বয়স জালিয়াতি করে হাফিজুর গত ২৮ আগস্ট যোগদান করেন ওই ইউনিয়নে। এর আগে রৌমারী উপজেলা প্রশাসন চলতি বছরের ৬ মে যাদুরচর ইউপিতে ২ জন, দাঁতভাঙ্গা ইউপিতে ৭ জন, রৌমারী ইউপিতে ৫ জন, বন্দবেড় ইউপিতে ৪ জন এবং শৌলমারী ইউপিতে একজন করে গ্রাম পুলিশ নিয়োগে বিজ্ঞপ্তি দেয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী যাদুরচর ইউনিয়নের পুরাতন যাদুরচর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস ছামাদ-দরদী খাতুন দম্পতির ছেলে হাফিজুর রহমান। তার জন্ম ৭ মে ১৯৮৫ সাল। তিনি চলতি বছর ২৭ মে জন্মনিবন্ধন করেছেন জন্ম ৭ মে ১৯৯৬ সাল দেখিয়ে। অথচ তার ছেলে নয়ন মিয়ার জাতীয় পরিচয়পত্রে অনুযায়ী জন্ম ১ মার্চ ১৯৯৯। এতে করে ছেলের চেয়ে মাত্র তিন বছরের বড় বাবা। আর বড় মেয়ের থেকে দেড় বছরের বড় বাবা।
যাদুরচর ইউনিয়নে পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য রবিউল হক বলেন, হাফিজুরসহ তার স্ত্রী-সন্তান সকলেই ভোটার হয়েছেন। জন্ম নিবন্ধন সনদ দিয়ে বয়স জালিয়াতি করে হাফিজুর রহমান গ্রামপুলিশে চাকরি নিয়েছেন। অথচ তার এনআইডি কার্ড রয়েছে। বয়স জালিয়াতি করে চাকরি তো আর এমনি কেউ দেয় না? এখানে অবশ্যই মোটা অংকের টাকার লেনদেন হয়েছে। কীভাবে চাকরি হলো তা নিয়োগদাতারাই ভালো বলতে পারবেন?
ওই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সদস্য হযরত আলী বলেন, হাফিজুর তার ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। তাদের ঘরেও সন্তান রয়েছে। একাধিকবার তারা ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বয়স জালিয়াতি করে এভাবে গ্রাম পুলিশের চাকরি অর্থ লেনদেন ছাড়া সম্ভব নয়। যোগ্য ব্যক্তি অনেকেই বঞ্চিত হয়েছে।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক এক গ্রাম পুলিশ বলেন, আমার কাছ থেকে চেয়ারম্যান তিন লাখ টাকা নিয়ে চাকরি দিয়েছে। শুনেছি গ্রাম পুলিশ নিয়োগে জনপ্রতি ৩-৪ লাখ টাকা করে নিয়ে নিয়োগ দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় বাসিন্দা মজিবর (৪৫) ও শমসের আলী (৫০) বলেন, ইউনিয়নের যোগ্য প্রার্থীদের বাদ দিয়ে টাকার বিনিময়ে গ্রাম পুলিশ পদে নিয়োগ দেওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। নিয়োগের এমন কারসাজির তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাই।
গ্রাম পুলিশ হাফিজুর রহমান বলেন, আমি জন্মনিবন্ধন দিয়ে চাকরি নিয়েছি। এনআইডিতে ভুল করেছে। আমি কী করবো।
যাদুরচর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান সরবেশ আলী হাফিজুর রহমানের স্কুল ও জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে চাকরি দেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তবে আর্থিক লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।
রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উজ্জল কুমার হালদার বলেন, বয়স জালিয়াতি করে চাকরি দেওয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ কেউ দিলে তদন্ত করে দেখা হবে।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সিফাত মেহনাজ বলেন, আপনার কাছ থেকে বিষয়টি প্রথম জানতে পারলাম। এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।













