দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও টেকসই গণতন্ত্রে আগামী জাতীয় নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব অক্ষুণ্ণ রাখা, টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করতে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন বক্তারা। তারা বলেন, আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ার ওপরই দেশের ভবিষ্যৎ গভীরভাবে নির্ভরশীল।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্স এবং ফেয়ার ইলেকশন অ্যাডভাইজরি কমিটির যৌথ উদ্যোগে ‘আগামী জাতীয় নির্বাচন ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।
সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সচিব ও ইলেকশন ওয়ার্কিং অ্যালায়েন্সের চেয়ারপার্সন প্রফেসর ড. মো. শরিফুল আলম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম।
প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। প্যানেল আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশিষ্ট রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ডাকসু নির্বাচন–২০২৫-এর চিফ রিটার্নিং অফিসার অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, চাকসুর সাবেক ভিপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, প্রশাসন ও পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “২০০১ সালের পর দেশে আর কোনো ভালো নির্বাচন হয়নি। বিগত ১৬ বছরে একটি দলীয় প্রশাসন তৈরি করা হয়েছে, যা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়।” তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসনের নিরপেক্ষ ও সক্রিয় ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি অভিযোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি আধিপত্যবাদী শক্তি বাংলাদেশে অস্থিরতা চায় এবং নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর হত্যাকারীরা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের অংশ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এ বিষয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান ড. মাহমুদুর রহমান।
বর্তমান সরকারের সিদ্ধান্তহীনতার সমালোচনা করে তিনি বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সরকার কতটা সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।” তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর দলীয় সংকীর্ণতা পরিহার করে নাগরিক সমাজের সামনে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. দিলারা চৌধুরী বলেন, গণতন্ত্র সংহত করতে গণমাধ্যমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে মিডিয়াকে দায়িত্বশীল ও নিরপেক্ষ থাকতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম এখনো দৃশ্যমান নয় এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ফলাফল প্রভাবিত করার আশঙ্কার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক ড. এ কে এম ওয়ারেসুল করিম বলেন, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনৈতিক রূপান্তরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণ। নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা, নিরপেক্ষতা ও সক্ষমতা নিয়ে জনআস্থা তৈরি করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, শুধু নিরপেক্ষ হওয়া নয়, কমিশনকে দৃশ্যতও নিরপেক্ষ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ভোটের ফল আগে থেকেই নির্ধারিত—এমন ধারণা থাকলে ভোটারদের অংশগ্রহণ কমে যাবে। তাই ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব অংশীজনকে নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট জসীম উদ্দিন সরকার বলেন, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব ভোটকেন্দ্র সিসিটিভির আওতায় আনা, কালো টাকা ও মাসল পাওয়ার নিয়ন্ত্রণ এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার জরুরি। তিনি শহীদ ওসমান হাদীসহ জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের হত্যাকারীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন বলেন, গণতন্ত্রের নামে দেশে গণতন্ত্র হত্যা করা হয়েছে। রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন ও নৈতিকতার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দেন তিনি।
অন্যান্য বক্তারা বলেন, শহীদ শরীফ ওসমান হাদী ছিলেন গণমানুষের কণ্ঠস্বর। তার হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত না হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি সম্ভব নয়। তারা প্রশাসনের নিরপেক্ষতা, সন্ত্রাস বন্ধ, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, ভোটকেন্দ্রে বডিক্যাম ও সিসিটিভি স্থাপন এবং কালো টাকার প্রভাব রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
বক্তারা একমত পোষণ করে বলেন, টেকসই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের জন্য অবাধ, স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। জনগণ ভোট দিতে প্রস্তুত—এখন নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে।
একে









